হাকালুকি হাওরে বিষ দিয়ে অবাধে মারা হচ্ছে পাখি

প্রকাশিত: ৪:০৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৪

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ 

প্রতিবছর শীত এলেই সুদূর সাইবেরিয়া থেকে এ দেশে আসে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। আশ্রয় নেয় দেশের বিভিন্ন হাওর-বাওরে। তাদের দেখতে এ সব স্থানে রীতিমতো ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। তবে নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গোপনে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় হাকালুকি হাওরে চলছে বিষ দিয়ে পাখি হত্যা।
হাকালুকি হাওরে বিষ দিয়ে পাখি হত্যার ঘটনা নতুন নয়।১৯৯৯ সালে সরকার এ হাওড়কে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া বা ইসিএ) ঘোষণা করে। এরপরও প্রায় প্রতিবছরই এ হাওরে এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালায় স্থানীয় শিকারিরা। তারা গভীর রাতে হাওরের বিভিন্ন বিলের কাছে একধরনের কীটনাশক ছিটিয়ে দেন। ভোরে খাবারের খোঁজে বিলে নেমে এসব কীটনাশক খেয়ে মারা যায় পাখি ও হাঁস। পরে সেগুলো স্থানীয় বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও লোকজনের কাছে বিক্রি করা হয়।

হাওর পারের এ উপজেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাওর শুকিয়ে যাওয়ায় শীত প্রধান বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অতিথি পাখিরা বিলে বিলে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে ও ‘বিষটোপ’ তৈরি করে বিভিন্ন বিলের পাড়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে। পাখিরা খাবার ভেবে প্রতিনিয়ত এসব টোপ খেয়ে মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া পেশাদার পাখি শিকারিরা শিকার করা এসব পাখি লুকিয়ে আশপাশের বিভিন্ন হাটবাজার ও বাড়ি বাড়ি ফেরি করে চড়া দামে বিক্রি করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জুড়ী এলাকায় একটি চক্র আছে তারা বিষ ও জাল দিয়ে পরিযায়ী পাখি ধরছে। তারা সেসব পাখি চড়া দামে স্থানীয় বাজারে পাখি বিক্রি করে। এটা তাদের লাভজনক। পাখি শিকার কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে।

এক শিকারি বলেন, হাকালুকি হাওড় এলাকায় পরিযায়ী পাখি চড়া দামে বিক্রি হয়। অনেকে তাদের কর্তাব্যক্তিদের উপহার হিসেবে দিতে বেশি দাম দিয়ে এসব পাখি কেনেন। অনেকে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখেন।

২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে অপরাধীর দুই বছরের জেল, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ আইনের তেমন প্রয়োগ দেখা যায় না। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালেও অধিকাংশ সময় অর্থদণ্ড দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয় অভিযুক্তদের।

এ প্রসঙ্গে পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সদস্য খোরশেদ আলম সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, শীত মৌসুমে একটি অসাধুচক্র পাখি শিকারের মতো নিকৃষ্ট একটি কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আমরা পাখির শিকার রোধে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছি, তবুও এসব বন্ধ করতে পারছি না। হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের বেশিরভাগ দেশি প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ছাড়াও পরিযায়ী পাখির বিচরণভূমি হিসেবে দেশের অন্যতম জলাভূমি। আইনের প্রয়োগের অভাবের কারণে মূলত এটি ঘটে। পাখি বিক্রি রোধে আরও কঠোর হতে হবে।