হাজারীবাগের পাচারকারীর কবলে দুই কিশোরী!

প্রকাশিত: ১১:৩৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০২৪

# অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোন, বলা হচ্ছে তাদের অবস্থান ভারতে
সাইফুল ইসলাম :
রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে তিনজন কিশোরী নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৬ জানুয়ারী বিকেল থেকে নিখোঁজ হলেও গতকাল পর্যন্ত তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে দুই কিশোরীর বিষয়ে গত বুধবার অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করে তাদের অবস্থান ভারতে বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হয়তো তারা পাচারকারী চক্রের কাছেই পড়েছেন। বিভিন্ন প্রলোভনেই হয়তো তাদের ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত ২৮ জানুয়ারী নিখোঁজ সুমনার মা নিলু আক্তার হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন। জিডি নম্বর-১৫৫৭।
জানা গেছে, গত ২৩ জানুয়ারী মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে নিখোঁজ হাজারীবাগ বোরহানপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন সুমনা আক্তার (১৫) ও খাদিজা আক্তার (১৪) নামের দুইজন কিশোরী বান্ধবী। ওই রাত থেকে সম্ভাব্য জায়গায় খোঁজাখুজি করে কিশোরীদের কোন হদিস পাননি তাদের স্বজনেরা। আবির নামের নয় মাসের শিশু সন্তান রয়েছে সুমনা এবং শাওন দম্পতির। কিশোরী সুমনার বাবা মো. ইদ্রিস মিয়া পেশায় দিনমুজুর। মা নিলু আক্তার, বিভিন্ন বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ নিউজ পোস্টকে বলেন, হাজারীবাগ এলাকায় মাঝেমাঝেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। তবে সুমনা ও খাদিজার বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি।
নিখোঁজ খাদিজা আক্তারের মা নাসিমা বেগম ও বিভিন্ন বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। বাবা আহাম্মদ হোসেন পেশায় মৎস্যজীবি। থাকেন নারায়নগঞ্জের মেঘনা এলাকায়। বাবার সঙ্গেই বসবাস করতেন খাদিজা। নিখোঁজের এক চারদিন আগে হাজারীবাগে মায়ের কাছে বেড়াতে এসেছিলেন।
গতকাল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় নিখোঁজ কিশোরীদের স্বজনদের। পরিচয় দিয়ে সুমনার মা নিলু আক্তারের সঙ্গে বলার চেষ্টা করা হলেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, বাবা এমন কোন জায়গা বাদ নেই মেয়েকে খুজিনি। বারবার পুলিশের কাছে গিয়েছি। তাদের কাছ থেকেও এখন পর্যন্ত কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এ সময় তার পাশে ছিলেন সুমনার বাবা মো. ইদ্রিস।
তিনি বলছিলেন, মেয়ে নিখোঁজের পর থেকেই কোন খাবার মুখে নেননি তার স্ত্রী। সারক্ষনই নাতী আবিরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। গত বুধবার রাত একটার দিকে সুমনার ইমু নাম্বার থেকে একটি কল আসে আমার ছেলে রাজু’র মোবাইলে। সেখানে একজন লোক বলছিলো আপনাদের মেয়ে ভারতে আছে পুলিশের কাস্টডিতে। আপনারা যথাযথ মাধ্যমে চেষ্টা করেন। ওই সময় সুমনাকে ও ভিডিও কলে কথা বলতে দেন ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি। তখন সুমনা জানায়, আমারে তোরা বাঁচা। আমি ও খাদিজা খুব বিপদে আছি। এরপর থেকে সুমনার সেলফোনটি আর চালু হয়নি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি।
কিছুক্ষণ পর এ প্রতিবেদকের কথা হয় নিখোঁজ খাদিজার মা নাসিমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, দুই বছর আগে সবুজ নামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় খাদিজার। তবে বাবা আহাম্মদ হোসেনর সঙ্গে আড়াই হাজারের মেঘনায় থাকেন খাদিজা-সবুজ দম্পতি। নিখোঁজের ২০ দিন আগে আমাকে দেখতে খাদিজা ঢাকায় আসে। আমি আমার মেয়ের সন্ধান চাই বলে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। এমন দৃশ্যে রীতিমতো ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ।
পাচার হওয়া নারীদের নিয়ে কাজ করেন বেসরকারী সংস্থা জাস্টিস এন্ড কেয়ারের প্রোগ্রাম সমন্বয়ক সিরাজুল ইসলাম বেলাল। গতকাল এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত নই। তবে এখন ঘটনাটি শোনার পর মনে হচ্ছে কিশোরীরা পাচারকারীদের কবলে পড়েছে। এ ধরনের পাচারের শিকার হওয়া নারী এবং শিশুদের গত সাত বছরে সাত শতাধিক ভুক্তভোগীদের আমাদের উদ্যোগে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: গত বছরের ৪ আগষ্ট মানব পাচারের অভিযোগে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে ৪ জনকে গ্রেফতার করে এলিট ফোর্স র‌্যাব-১ এর একটি দল। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ২ জন নারী ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, পাচারকারী চক্রের মূল হোতা মো. রোস্তম আলী ওরফে সৈকত (৪৫), তার সহযোগি হাজেরা বেগম (৩৫), সোহেল রানা (২৫) ও বাইজিদ হোসেন (২২)। র‌্যাব বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তরুণীদের বিদেশে চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে পাচার এবং অসামাজিক কার্যকলাপে বাধ্য করত।