নিজস্ব প্রতিবেদক:
মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা লুৎফর রহমান, কালু নামেই তাকে সবাই চেনে। তিনি কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচ ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বাজারটিতে কেউ কেউ ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। ফলে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম পড়ে ৬৪০ টাকা। অথচ এই মরিচ কারওয়ানবাজার পাইকারি মার্কেটে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আজ শনিবার (১ জুলাই) নগরীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এক হাত বদলেই প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের ২০০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি না হওয়া পর্যন্ত দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা লুৎফর রহমান দাবি করে বলেন, আমি প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) কাঁচা মরিচ দুই হাজার ৫০০ টাকা দরে পাইকারি বাজার থেকে কিনেছি। এই মরিচ পরিষ্কার করতে হয়। এছাড়া খুচরায় বিক্রি করলে কিছু বেশি যায় ফলে ৬০০ টাকায় না বিক্রি করলে লোকসান হবে। শুধু টাউন হল কাঁচাবাজার নয়, সেগুনবাগিচা, বিএনপি কাঁচাবাজার, নিউ মার্কেটের বনলতা কাঁচাবাজার, লালবাগের নবাবগঞ্জ বাজার, পলাশী বাজার, কামরাঙ্গীরচর রসুলপুর ব্রিজ মার্বাকেট সংলগ্জান গরীবের বাজার, মহাখালী ও গুলশান কাঁচা বাজারেও খুচরায় ৬০০ থেকে ৬৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।
পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মূলত তিনটি কারণে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। প্রথমত সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ রয়েছে। যে কারণে ঈদের আগে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৪০০ টাকা। ভারত থেকে রোব ও সোমবার আমদানি শুরু হলে কাঁচা মরিচের দাম কমবে।
এছাড়া কোরবানির ঈদে গরু ও খাসির মাংস রান্নায় অন্যতম মসলা হিসেবে ব্যবহার হয় কাঁচা মরিচ। যে কারণে আমদানি কমলেও বেড়েছে চাহিদা। এছাড়া দেশীয়ভাবেও অতিবৃষ্টিতে উৎপাদন কমেছে। অধিক বৃষ্টিপাতে কাঁচা মরিচের জমিতে পানি জমলে মরিচের গাছ মরে যায়। জমির পানি সহজেই নিষ্কাশন হয় এমন জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে মরিচের জমিতে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হওয়ায় অনেকের মরিচ গাছ মরে গেছে। ফলে উৎপাদনও কমেছে। মূলত এই তিনটি কারণেই কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
কারওয়ানবাজারের পাইকারি মরিচ বিক্রেতা মো. আশরাফুল আলম ৪০০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন। দামবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মরিচের পাল্লা দুই হাজার টাকা। বৃষ্টিতে খেতে মরিচ নাই, নষ্ট হয়ে গেছে। কোরবানিতে মরিচের চাহিদাও বাড়তি। ভারত থেকে এলসি শুরু হলেই কাঁচা মরিচের দাম বাড়বে।
কৃষি তথ্য সার্ভিস জানায়, মূলত তিনটি কারণে কাঁচা মরিচের দাম বাড়তি। বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের জমি নষ্ট, কোরবানিতে বাড়তি চাহিদা ও ভারত থেকে আমদানি বন্ধ। প্রায় সব অঞ্চলেই এর চাষাবাদ হয়। তবে চরাঞ্চলে মরিচের উৎপাদন বেশি হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন চর এলাকায় মরিচ প্রধান কৃষি ফসল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাছাড়া উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মরিচের চাষ হয়ে থাকে।
এদেশে রবি এবং খরিপ মৌসুমে মোট ১ দশমিক ২ লাখ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয় এবং উৎপাদন হয় ১ দশমিক ৩ লাখ মেট্রিক টন (শুকনা মরিচ)। গড়ে হেক্টর প্রতি ফলন ১ দশমিক ২৭ টন। চরাঞ্চলসহ মাগুরা, ফরিদপুর, বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, কুমিল্লা, রাজশাহী, নীলফামারী, ডোমার, পঞ্চগড়, পাবনা, মেহেরপুর জামালপুর ও লালমনিরহাটে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি সারা বছর ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হয়। কিন্তু ব্যাপক বৃষ্টিতে চরাঞ্চল ডুবে গেছে এবং মরিচের গাছ নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায় নিউজ পোস্ট বিডিকে বলেন, বর্ষায় মরিচের জমি ডুবে গেছে। কেউ যদি জমির ওপরে পলিথিন দিয়ে চাষাবাদ করে তবে উৎপাদন ঠিক থাকে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে খরচ বেশি। চরাঞ্চলের জমিও ডুবে গেছে। ঈদের মধ্যে চাহিদা বেড়েছে। তবে এত দাম বৃদ্ধির রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে। আশা করি দ্রুত কাঁচা মরিচের দাম কমবে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের পরে সবজির দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা। দেশি টমেটো প্রতি কেজি ১৫০, ভারতের টমেটো ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পটল ৪০, বেগুন ১০০ থেকে ১১০, ঢেঁড়স ৬০, ঝিঙা ৬০, চিচিঙ্গা ৬০, পেঁপে ৬০, লাউ ৬০, মুলা ৬০, কচুরমুখী ১০০, শসা ৫০ থেকে ৬০, দেশি গাজর ৮০ ও চায়না গাজর ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস ফুলকপি ৫০, বাঁধাকপি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।