চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘরে হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
শনিবার (১০ আগস্ট) নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন চেরাগী পাহাড় মোড়ের সড়ক অবরোধ করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা এই কর্মসূচিতে অনেকেই মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানান। তাদের অনেকের হাতেই ছিল প্ল্যাকার্ড। সেখানে লেখা ছিল ‘আমরা কেন স্বাধীন নই’, ‘আমার মন্দিরে হামলা কেন?’, ‘দেশ ছাড়তে হুমকি কেন? রাষ্ট্র জবাব চাই’, ‘মানবসেবা যাদের ধর্ম তাদের ওপর হামলা কেন?’, ‘বাঁচতে হলে লড়তে হবে, আঘাত আসবে যেখানে প্রতিরোধ হবে সেখানে’।
কর্মসূচি চলাকালে চেরাগী পাহাড়মুখী সড়কে গাড়ি চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকে। কর্মসূচিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুসহ জাতিগত সংখ্যালঘুদের মন্দিরে হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ঘটনার বিচার করতে হবে। দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ না হলে, বিচার না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আন্দরকিল্লা, মোমিন রোড, চেরাগী মোড়, জামালখান, নন্দনকাননসহ আশপাশে এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে এই কর্মসূচি। সন্ধ্যা ৬টার দিকে কর্মসূচি শেষ হয়। এরপর রাস্তা ছেড়ে দেওয়া হয়।
সমাবেশে জানানো হয়, দেশব্যাপী নির্যাতন ও লুটপাটের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। এছাড়া সরকারি উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত ঘর, মন্দিরসমূহ নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি করেন তারা।
এদিকে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ, হামলাকারী চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচার এবং হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং বাস্তুহারাদের জায়গা জমি ফিরিয়ে দেওয়ায় সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে আগামী ১১ আগস্ট বিকেল ৩টায় নগরের আন্দরকিল্লা চত্বরে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চাভুক্ত সংগঠনসমূহ সমাবেশ ও ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করেছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়, দলটির নেতাদের ঘরবাড়ি, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়, কোথাও কোথাও আগুন দেওয়া হয়।
এসবের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিরাতেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা চট্টগ্রামের মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা পাহারা দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।