হারিয়ে যাওয়ার ২১ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন বাবা-মা

প্রকাশিত: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২৩

ঠাকুরগাঁও প্রতিবেদক:

২১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ছেলে মতিউর রহমানকে অবশেষে ফিরে পেয়েছেন তার বাবা-মা। ভারত থেকে এক বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

আজ শুক্রবার ভারতের ফুলবাড়ি ও বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। পরে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাবা-মায়ের কাছে তুলে দেওয়া হয় ছেলেকে।

এ সময় শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের নীতিশ শর্মা উপস্থিত ছিলেন। মতিউর রহমান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ দেবীডাঙ্গা গ্রামের সহিদুল ইসলামের বড় ছেলে। ২০০২ সালে ১৫ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়ার পর ঠাকুরগাঁও সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তার পরিবার। তারপরেও তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, ২০১৯ সালের জুনে ভারতের মহারাষ্ট্রের কারজাত এলাকার রাস্তা থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মতিউরকে উদ্ধার করে শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। ওই ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে জানা যায় মতিউর বাংলাদেশী। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিষয়টি স্থবির হয়ে পড়ে।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের রাহা নবকুমারের সাথে যোগাযোগ করেন শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের নীতিশ শর্মা। তাদের মাধ্যমেই ঠাকুরগাঁও জেলায় মতিউরের স্বজনদের খুঁজে পাওয়া যায়। ৭/৮ মাস আগে পরিবারের সাথে কথা বলা শুরু হয়। ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে মতিউর।
মতিউর রহমান বলেন, ‘আমি কিভাবে ভারতে গেলাম আমার মনে নেই।

আমি আজ দেশে ফিরেছি। বাবা-মাকে পেয়েছি। বাড়িতে গেলে হয়তো আরো অনেক কিছু মনে পড়বে।’
মতিউরের বাবা সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। আমি যখন অবসর গ্রহণ করি ঠিক সেই সময়েই মতিউর হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আমরা তার খোঁজ পাইনি। ২১ বছর পর আমরা আমাদের ছেলেকে খুঁজে পেয়েছি চেয়ে বড় আনন্দ কি হতে পারে।’

মতিউরের মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম আর কখনো আমার ছেলের দেখা পাব না। অনেকে বলত, হয়তো মারা গেছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তায় ইচ্ছা আবার আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেয়েছি।’

শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের নীতিশ শর্মা বলেন, ‘আমরা মূলত ভবঘুরে, আশ্রয়হীন মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করি। ২০১৯ সালে আমরা মতিউরকে খুঁজে পাই। তারপর তাকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হয়। এরপর আমরা তার পরিবারের খোঁজে নামি। এ ব্যাপারে আমাদের নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের রাহা নবকুমার অনেক সহযোগিতা করেছেন। তার মাধ্যমেই মতিউরের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ আমরা তাকে তার পরিবারের কাছে তুলে দিতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্যেও আনন্দের।’