হার্টের রিংয়ের বৈষম্যমূলক দাম অবৈধ ঘোষণা করতে রুল

প্রকাশিত: ৮:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে হৃদরোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সবচেয়ে আধুনিক স্টেন্টের (হার্টের রিং) বৈষম্যমূলক দাম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে আজ সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, নাঈম সরদার ও ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার।
এর আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর গত ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করে। এর আগে ভারতের ‘জাতীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ’ চলতে বছরের ৩১ মার্চ তাদের দেশে স্টেন্টের দাম ঠিক করে দেয়। দুই দেশের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় সব মানের স্টেন্টের দাম বাংলাদেশে ভারতের চেয়ে সর্বোচ্চ তিন গুণ বেশি।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর দেশে ২৭টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য স্টেন্টের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে। অধিদফতরের প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় নীতিমালা বা মার্কআপ ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়েছে মাত্র ৪টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের এই চার প্রতিষ্ঠানের একই মানের স্টেন্টের মূল্য দাঁড়িয়েছে ভারতের প্রায় তিন গুণ।
৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে— এইচআরএস কার্ডিয়াক কেয়ার লিমিটেড, ম্যাট্রোনিক বাংলাদেশ লিমিটেড, মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড ও ভাসটেক লিমিটেড। এর মধ্যে এইচআরএস কার্ডিয়াক কেয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের স্ত্রী খুরশীদ জাহান। আর বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা জড়িত।
আমদানিকারক বাকি ২৩ প্রতিষ্ঠানের স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কআপ ফর্মুলা মানা হয়নি। তারপরও যে দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে তা ভারতে চলমান দামের চেয়ে সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেশি। কিন্তু ভারতের তৈরি দুটি ব্র্যান্ডের স্টেন্টের দাম ধরা হয়েছে সে দেশে যে দামে বিক্রি হয়, তার চেয়ে ১১ হাজার টাকা কম। আবার বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ডের তৈরি যে দুটি ব্র্যান্ডের স্টেন্ট সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়— সেগুলোর একটির দাম ভারতের দ্বিগুণ, অন্যটির দাম তিন গুণ বেশি।
যেমন আয়ারল্যান্ডের অ্যাবোট ভাসকুলার কোম্পানির তৈরি জিয়েন্স প্রাইম ব্র্যান্ডের একটি স্টেন্টের দাম ভারতে বাংলাদেশি টাকায় ২৯ হাজার ৯২৫ টাকা। বাংলাদেশে দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। একই দেশের বোস্টন সায়েন্টিফিকের তৈরি প্রোমুস এলিট ব্র্যান্ডের স্টেন্টের দাম বাংলাদেশে ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। ভারতে সেটির দাম ২৯ হাজার ৯২৫ টাকা।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের এই বৈষম্যমূল দামে অসন্তুষ্ট হয়ে ওশান লাইফ লিমিটেডসহ ১১টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে গতকাল রোববার (১৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সাতটি প্রতিষ্ঠান ও এক ব্যক্তিকে রিটে বিবাদী করা হয়।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর যে দাম নির্ধারণ করেছে তা বৈষম্যমূলক। এর ফলে চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যদের জন্য যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তারা ওই দামে হার্টের রিং আমদানিই করতে পারবে না। ফলে বাজারে কেবল টিকে থাকবে চারটি প্রতিষ্ঠান। এর ফলে বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি হয়। সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পরবে। আশা করছি, বিবাদীরা যথাসমেয় রুলের জবাব দেবে।
তিনি আরও বলেন, আবেদনকারী ১১টি প্রতষ্ঠানের ব্যবসা করার অধিকার রয়েছে। বৈষম্যমূলক দামের কারণে আবেদনকারীরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। একইসঙ্গে যাদের হার্টের রিংয়ের প্রয়োজন, তাদের অতি উচ্চমূল্যে রিং ক্রয় করতে হবে। তারাও তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।