হিমালয়ে সেনা সরানোর মাধ্যমে ভারত ও চীনের সীমান্ত বিরোধের অবসান

প্রকাশিত: ১১:২৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারত ও চীন তাদের বিরোধপূর্ণ হিমালয় সীমান্তে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু করেছে। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দুই দেশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এটি এশিয়ার দুই শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে ৪ বছর আগে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক পরিবর্তন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ভারতের পশ্চিম হিমালয়ের লাদাখ অঞ্চলে সীমান্তে দুই দেশের সেনারা যেখানে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। সেখানে এখন সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত সরকারের একটি সূত্র। বুধবার থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং চলতি মাসের শেষে তা সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমনটিই জানিয়েছেন ভারতের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।

সাম্প্রতিক সপ্তাহে সীমান্তে টহল দেওয়ার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে হয়েছে। এতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, সম্প্রতি ভারত ও চীনের মধ্যে চুক্তির আওতায় তাদের সামনের সারির সেনারা সংশ্লিষ্ট কাজ করছে এবং এখন পর্যন্ত অগ্রগতি সন্তোষজনক।

এ বিষয়ে জ্ঞাত নয়াদিল্লির একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ডেপসাং ও ডেমচক এলাকা থেকে দুই দেশের সেনারা পিছু হটতে শুরু করেছে। যা ছিল দুই পক্ষের মধ্যে শেষ মুখোমুখি অবস্থানের স্থান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, সেনারা শুধু পিছু হটছেন না। বরং স্থাপন করা কুঁড়েঘর ও তাঁবু গুটিয়ে নিচ্ছেন এবং যেসব যানবাহন সীমান্তে আনা হয়েছিল সেগুলোকেও ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে দুই পক্ষের সেনারা আগের মতো সীমান্তে টহল শুরু করতে পারবেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

নতুন চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। তবে এটি ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় ও ৪ জন চীনা সেনা প্রাণ হারান।

এর আগে দুই পক্ষ আরও পাঁচটি মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছিল। তবে সর্বশেষ সেনা সরানোর ঘটনা ঘটেছিল দুই বছরেরও বেশি আগে।

বুধবারের বৈঠকে শি ও মোদি সংঘাত নিরসনে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হন। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, নয়াদিল্লি এখনও সতর্ক রয়েছে এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

১৯৬২ সালে এশিয়ার দুই প্রতিবেশী অনির্ধারিত সীমান্ত নিয়ে যুদ্ধ করে। যা তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নিয়মিত বিরোধের একটি বড় কারণ হয়ে আছে।

ভারত ২০২০ সালের পর চীনের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। শত শত চীনা মোবাইল অ্যাপস নিষিদ্ধ করে এবং চীনা বিনিয়োগে অতিরিক্ত যাচাই আরোপ করে। বড় বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো, যেমন বিওয়াইডি ও গ্রেট ওয়াল মোটরসের প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রায় পুরোপুরি আটকে রাখা হয়।

ভারতের সরকার জানিয়েছে, সম্প্রতি উত্তেজনা প্রশমনের পর আকাশপথ খোলার বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং ভিসা অনুমোদন দ্রুত করার পরিকল্পনা আছে। তবে, নয়াদিল্লি চীনের বিরুদ্ধে নেওয়া সব পদক্ষেপ খুব শিগগিরই প্রত্যাহার করবে না।