হ্যাচারি ছেড়ে দলে দলে সমুদ্রযাত্রায় কাছিমের দেড় হাজার বাচ্চা

প্রকাশিত: ১:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০২৫


নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতের বালুচরে প্রায় তিন মাস আগে শতাধিক ডিম পেরেছিল একটি অলিভ রিডলে প্রজাতির মা কাছিম। পরিবেশকর্মীরা বালুচর থেকে ডিমগুলো সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করেন। আর সেই ডিম ফুটে এখন দলে দলে সমুদ্রযাত্রা শুরু করেছে কাছিমের বাচ্চাগুলো।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে সংরক্ষিত সেসব ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে শুরু করেছে।বাচ্চাগুলো অবমুক্ত করা হচ্ছে সাগরে। এভাবে রামু প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতের বেলাভূমি দিয়ে গত ২০ দিনে দেড় হাজার কাছিমের বাচ্চা সাগর জলে অবমুক্ত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকেলে একদিনে ছাড়া হয় ১২০টি কাছিমের ছানা। অলিভ রিডলি প্রজাতির ছানাগুলো নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) পরিচালিত প্রজনন হ্যাচারিতে জন্ম নিয়েছে।

সৈকতের প্যাঁচার দ্বীপ পয়েন্টে বন বিভাগ ও নেকমে কর্মকর্তারা সাগরের ঝাঁড়ুদার হিসেবে পরিচিত এসব কাছিমের ছানাগুলো অবমুক্ত করেছেন।

নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম জানান, কক্সবাজার উপকূলের ১২টি স্থান থেকে গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে এপর্যন্ত ২৫ হাজার ডিম সংগ্রহ করা হয়ছিল। এসব ডিম গুলো সোনাদিয়া দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, রামুর প্যাঁচার দ্বীপ, হিমছড়ি এলাকার হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিশেষ কায়দায় রাখা ডিম থেকে ৬০ থেকে ৯০ দিনে বাচ্চা ফুটে উঠে। পরে এসব বাচ্চাগুলো নিরাপদে সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়। এ উদ্যোগ কাছিম প্রজনন ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শুক্রবার বিকেলে কাছিম ছানা অবমুক্ত করতে উপস্থিত হওয়া কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক বলেন, বন রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণে কাজ করছে বন বিভাগ। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কাছিম। সাগরের ঝাঁড়ুদার হিসেবে পরিচিত কাছিমের সংখ্যা বাড়াতে ছানা প্রজনন অব্যাহত রাখার চেষ্টা চলে। এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব কক্সবাজারের উপদেষ্টা আ.ন.ম হেলাল উদ্দিন বলেন, কাছিম সাগরের পরিবেশের রক্ষাকবজ। এরা সাগরের ময়লা পরিষ্কার করে। এসব কাছিমের ছানা অবমুক্ত করার মাধ্যমে সমুদ্রের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় এধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি ডিম পাওয়া গেছে। আগামী মাস পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করা যাবে। সমুদ্র উপকূলে মানুষের চলাচল সংরক্ষিত ও রাতে আলোর ব্যবহার না থাকলে সাগরের কাছিম গুলো ডিম পাড়তে আসে উপকূলে।