ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পর উপহার পাঠানোর নামে ফাঁদে ফেলে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে দুই মাসে অন্তত পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিদেশি প্রতারকরা। চক্রের নাইজেরিয়ান ১২ সদস্য ও তাদের এ দেশীয় সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর আগে মঙ্গলবার রাজধানীর পল্লবী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ল্যাপটপ, ১৪টি মোবাইল ফোন ও বিপুল পরিমাণ সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নান্দিকা ক্লিনেন্ট চেকেনজু, ক্লেটাস আছুনা, ওনিকুলভ টিমেটি চিনঙ্গি, একিন উইসডম, চিগোজি, ইভুন্দে গ্যাব্রিল ওবিনা, সেলেস্টাইন প্যাট্রিক ওবাইজুলু, মর্দি ন্যামডি কলিন্স, ওর্দু চুকুড স্যামি, ডুবুওকন সোমায়িনা, জেরেম প্রিসাস একিমি, ওক উইসডম চিকাওদো এবং তাদের সহযোগী ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন।
এ বিষয়ে জানাতে বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা মেট্রো) শেখ মো. রেজাউল হায়দার বলেন, ‘ভুক্তভোগী একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তে দেখা যায়, প্রতারকরা অভিনব কায়দায় বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। একপর্যায়ে তারা একটি উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। পরে মেসেঞ্জারে উপহার সামগ্রীর এয়ারলাইন বুকিংয়ের ভুয়া কাগজপত্র পাঠায়। উপহারের বাক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের সামগ্রী রয়েছে বলেও জানায়। ভুক্তভোগীকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাস্টমস গুদাম থেকে উপহারটি গ্রহণ করতে বলে তারা। এক পর্যায়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন নিজেকে কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীকে ফোন করেন। তিনি জানান, চার লাখ ২৫ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করে উপহার সামগ্রী নিতে হবে। কয়েকটি ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হয়। আবার উপহার সংগ্রহ না করলেও আইনি জটিলতার ভয় দেখায়। ফলে ভুক্তভোগী তাদের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বরে তিন লাখ ৭৩ হাজার টাকা জমা দেন।’
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, একই কৌশলে প্রতারক চক্র সারাদেশের বহু মানুষকে প্রতারিত করেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে এই দেশে অবস্থান করে প্রতারণা করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছে সিআইডি।
প্রতারণা থেকে রেহাই পেতে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি। তিনি বলেন, ‘বাড়ির মালিকরা বিদেশি নাগরিককে ভাড়া দেওয়ার আগে তাদের বৈধ কাগজপত্র ও পাসপোর্ট যাচাই করে নেবেন। ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়া থেকে বিরত থাকুন। প্রতিবেশী বা এলাকায় কোনো বিদেশি ব্যক্তি বাসাভাড়া নিলে বা সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দিন। কেউ যদি টেলিফোনে বা ফেসবুকে এ ধরনের উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেয় তাহলে পুলিশকে জানান।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের বিশেষ পুলিশ সুপার কানিজ ফাতেমা ও অর্গানাইজড ক্রাইমের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক।