১৩ টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা কাজ পাননি একটিও

প্রকাশিত: ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪

ঢাকা প্রতিনিধি:

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৩টি ঠিকাদারি কাজে সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ার পরও গত চার বছরে প্রথম শ্রেণির কাজ পায়নি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে বেশি অর্থ ব্যয়ে পছন্দের অন্য ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। ডিএনসিসির প্রকৌশলী ও শীর্ষ কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে অসাধু ঠিকাদারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে কাজ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে অন্তত ১৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সংস্থাটির।

১১ আগস্ট ভুক্তভোগী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএম কনস্ট্রাকশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগপত্রের সঙ্গে প্রতিটি কাজের বিস্তারিত তথ্য সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি অভিযোগের একটি অনুলিপি দেওয়া হয় ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান প্রকৌশলীকে।
তবে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম সমকালকে বলেন, ওই ঠিকাদার কখনও এ বিষয়ে তাঁর কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেননি। এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেনও না।
ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, ওই ঠিকাদার আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। যে কাজগুলোর কথা তিনি বলেছেন, তার অনেকটিই আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগে ঘটেছে। আমি বলেছি, এসব ঘটনা কেন ঘটল, প্রয়োজনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি যে একেবারে কাজ পাননি, সেটাও বলা যাবে না। অন্য ঠিকাদাররা যেভাবে কাজ করেছেন, তিনিও সেভাবে কিছু কাজ পেয়েছেন। বর্তমানে সুন্দরভাবে কাজ করার একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন সর্বনিম্ন দরদাতা হলে কাজ পেতে বাধা থাকবে না।

অভিযোগপত্রে বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএম কনস্ট্রাকশনের প্রোপ্রাইটর হাছিবুর রহমান অভিযোগ করেন, প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গত ৩০ বছর অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে আসছেন। গত চার বছরে ডিএনসিসির বিভিন্ন দরপত্রে অংশগ্রহণ করেন। ১৩টি কাজের দরপত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এবং উদ্ধৃত দরের ১০ শতাংশ কম দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ার পরও কোনো কারণ ছাড়াই পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল অমান্য করে অযোগ্য করা হয়েছে। বিপরীতে ১০ শতাংশ বেশি দরে কাজ দেওয়া হয়েছে অন্য ঠিকাদারকে। এতে ডিএনসিসির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৭ কোটি ৪২ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এ বিষয়ে একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও তার কোনো সঠিক জবাব দেয়নি।
উপদেষ্টার কাছে দেওয়া নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওই ১৩টি কাজের মধ্যে ৭টিরই দরপত্র আহ্বানকারী কর্মকর্তা ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী এমডি ফরহাদ। সম্প্রতি বরখাস্ত হওয়া ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের লোক হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। এ জন্য তিনি অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকেও পাত্তা দিতেন না বলে অভিযোগ আছে। এ প্রসঙ্গে ফরহাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

এ ছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম, কামরুল হাসান, সাইফুদ্দিন মানিকসহ আরও কয়েকজন ছিলেন এসব ঠিকাদারি কাজের দরপত্র আহ্বানকারী কর্মকর্তা। তারাও কেউ এর দায় নিতে চাইছেন না।

আগারগাঁও, মাহবুব মোরশেদ সরণি ও শিশুমেলা পর্যন্ত এলাকার সড়ক উন্নয়নের কাজের দরপত্র আহ্বান করেছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আলম। ওই কাজে সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া এসএম কনস্ট্রাকশনের দর ছিল ৯ কোটি ২১ লাখ ৬ হাজার ৬২০ টাকা। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল জনি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড। তাদের দর ছিল ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৮২ হাজার ১৭১ টাকা। প্রায় ৭৭ লাখ টাকা বেশি দরে জনি এন্টারপ্রাইজকে কাজটি দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আলম অবশ্য দাবি করেন, ওই দরপত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একটি টার্নওভারের কাগজের বিষয়ে কোয়ারি দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই প্রশ্নের জবাব দেয়নি। ফলে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজটি দিতে হয়।
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হাছিবুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোনো কোয়ারির চিঠি আমাকে দেওয়া হয়নি। এখন আমি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছি। এখন তারা তদন্ত করে আমার প্রতি অবিচারের জবাব দেবে।