
দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পাঠকপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলেই দেখা মেলে পরিচিত এক মুখ—সেলিনা খাতুন। পেশাগতভাবে তিনি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), তবে এলাকাবাসীর কাছে তিনি পরিচিত ‘ডাক্তারনী আপা’ নামে।
৩২ বছর বয়সী সেলিনা খাতুন ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর পাঠকপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি হিসেবে যোগ দেন। তারপর থেকেই একটানা কাজ করে যাচ্ছেন গ্রামীণ মানুষের পাশে থেকে। ক্লিনিকটি খোলা থাকে সপ্তাহে ছয় দিন, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এই সময়ে তিনি গড়ে ৪০-৪৫ জন রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
সেলিনা খাতুন থাকেন পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর উপজেলার মরনাই গ্রামে, স্বামী হাইকুল ইসলাম ও ৬ বছর বয়সী মেয়ে উমায়রাকে নিয়ে। স্বামী একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। পিতার বাড়ি ক্লিনিকের কাছেই হলেও তিনি থাকেন শ্বশুরবাড়িতে।
গ্রামের নারীদের কাছে তিনি খুব আপনজন। রোগের কথা খোলামেলা বলতে পারেন তারা।
পাঠকপাড়া গ্রামের রোকনাসা বেগম বলেন, ‘‘জ্বর আর দুর্বলতা নিয়ে ডাক্তারনী আপার কাছে এসেছি। উনার ওষুধ খেলেই আমি ভালো হয়ে যাই।
গর্ভবতী তাপসী রাণী বলেন, গর্ভধারণের পর থেকেই নিয়মিত উনার চিকিৎসা নিচ্ছি। ভালো থাকলে মিষ্টি খাওয়াবো বলেছি।
সেলিনা জানান, প্রতিদিনের সব তথ্য বিকেল ৩টার মধ্যে অনলাইনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাতে হয়। কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, প্রতি রোগীর কাছ থেকে ২ টাকা নেওয়া হয়, এই টাকা দিয়ে আয়ার বেতন ও অন্য খরচ চালানো হয়।
স্থানীয় নারীদের ভালোবাসা ও আস্থা তার প্রেরণা। কেউ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ‘ডাক্তারনী আপা’ বলে ডাকলে সেটা তার কাছে সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘‘পাঠকপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে এফডাব্লিউএ-এর পদ শূন্য থাকায় সেলিনা খাতুনসহ কর্মরত দুইজনকেই বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবুও সেলিনা খাতুন খুব ভালো কাজ করছেন। তার কাজের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পুরস্কারের ব্যবস্থাও রয়েছে।
সেলিনা খাতুন বলেন, মানুষের জন্য কাজ করেই শান্তি পাই। ডাক্তারনী আপা হয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।