১৫ বছরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বারবার ক্ষমতায় এসেছি বলেই একটা গণতান্ত্রিক ধারা ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত আছে। এ জন্যই আজ বাংলাদেশের এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এখন গ্রামে গ্রামে সেই হাহাকার নেই। তারপর আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। আর আমাদের পেছনে দিকে তাকাতে হবে না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।
আজ সোমবার (৩ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে গাজীপুর, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩-১৪ সালের অগ্নিসন্ত্রাস; সাড়ে ৩ হাজার গাড়ি বাস, লঞ্চ স্টিমার পোড়ানো; ৫০০ জনের মতো মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা—এই ধরনের ভয়াবহ অবস্থা আমরা দেখেছি। কাজেই সেই ধরনের অবস্থা আর সৃষ্টি করুক, আমরা চাই না। বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা যেন অব্যাহত থাকে; বাংলাদেশের মানুষ যেন শান্তিতে বাস করতে পারে; সবাই যেন উন্নত জীবন পায়—সেটাই আমরা চাই।
মেয়র ও কাউন্সিলরদের উদ্দেশ করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন। আশা করি জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবেন। আজ থেকে ১৫ বছরের আগের বাংলাদেশ কেমন ছিল, একটু চিন্তা করেন। জনগণ আপনাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা আপনাদের পূরণ করতে হবে। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসি। দেশের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সবকিছুর উন্নতির মধ্য দিয়ে এই সময়ে বাংলাদেশ বদলে গেছে কি না, সেটা আপনাদের থেকে জানতে চাই। আন্তরিকভাবে এই প্রচেষ্টা আমরা চালিয়েছি কেবল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের জন্য।
জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশে ফেরার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমি এমন একটি দেশে এসেছিলাম, যেখানে আমার পিতা-মাতা ও ভাইয়ের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যেখানে খুনিরা ছিল ক্ষমতায়। আর ছিল স্বাধীনতাবিরোধী, জিয়াউর রহমান যাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। আমাকে বারবার হত্যার চেষ্ট করা হয়েছে। পিতা-মাতার বিচারের জন্য আমাকে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর এটা পেরেছি ক্ষমতায় আসতে পেরেছি বলেই।
বৈশ্বিক মহামারির প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও কোভিড-১৯-এর অতিমারির কারণে অর্থনৈতিক মন্দা বিশ্বব্যাপী। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়। বরং বাংলাদেশে তো আমরা এখনও বলিনি যে দুটো-তিনটার বেশি টমেটো কিনতে পারবেন না, ৬টার বেশি ডিম কিনতে পারবেন না। পানি ব্যবহার করতে পারবেন না। বিদ্যুৎ এতটুকুর বেশি ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে সেই অবস্থা চলছে। লন্ডনে বাজারে গেলে তো সীমিত জিনিসই কিনতে হবে। তার বেশি কেনা যাবে না। বিদ্যুৎ একটু ব্যবহার করলেই ফাইন দিতে হবে। গাছে পানি দেওয়া যাবে না। বাতলিতে করে একটু একটু করে পানি দিতে হবে। পানি দিয়ে গাড়ি ধোয়া যাবে না। শুধু লন্ডন নয়, ইউরোপের সব জায়গায় এই একই অবস্থা।
মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে এমনটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানি জিনিসের দাম বেড়েছে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ঈদের আগে পাটগাতী বাজার (প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার বাজার) থেকেই ২০০ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে। ওই বাজারে ৫৫ ইঞ্চি টিভিও পাওয়া যাচ্ছে। ওখানে কয়েকটি টিনের ঘর ছাড়া আর কিছু ছিল না।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর সারা দেশ ঘুরে বেড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি এ জন্যই যে দেশটাকে না চিনলে উন্নতি করবো কীভাবে? যখনই সরকারে এসেছি, সেই মোতাবেক কাজ করেছি, আজ উন্নয়নটা করতে পেরেছি। আমাদের কাজ জনগণের সেবা করা। আমরা সেই চেষ্টাটাই করেছি। আমাদের লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ করা।
এ সময় খুব শিগগিরই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করতে যাচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক পরিশ্রমটা করেই আমাদের এই উন্নয়নটা করতে হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জনসংখ্যা বেশি। চাষ উপযোগী জমি কম। তারপরও আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারপরও যুদ্ধের কারণে আজ ভোজ্যতেল, গম, জ্বালানি তেল, চিনি—এ রকম অনেক কিছু বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর দাম বিশ্বে বেড়ে গেছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জানি এখানে অন্য দলেরও অনেকে আছেন। তারপরও কে ভোট দিলো, সেটা দেখে নয়, দেশের প্রত্যেক জনগণের জন্যই আমাদের কাজ করতে হবে। বিষয়টি এমন নয় যে আওয়ামী লীগের লোকজন পাবে, অন্যরা পাবে না। আমরা সবার জন্যই কাজ করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমাদের কাঁচা মরিচও আমদানি করতে হয়। কেন করতে হবে? জানি বর্ষাকালে খেতে পানি উঠে যায়। মরিচ তোলা যায় না বা মরিচ পচে যায়। সে জন্য সমস্যা হয়। এখন থেকে আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিজেদের করতে হবে। নিজেই আমরা গাছ লাগাবো, উৎপাদন করবো। ছাদবাগান অথবা ভাসমান বাগান করবো। ঝুলন্ত বাগান করবো। আমার এলাকায় কিন্তু আমি শুরু করে দিয়েছি। গণভবনও এখন মোটামুটি খামার বাড়ি করে ফেলেছি। আমার ছাদেও মরিচগাছ আছে।
তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারে না। বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে এখন সম্মানের চোখে দেখে। আমরা এই উন্নতিটা করতে পেরেছি বলেই সম্ভব হয়েছে।