টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
আলোচিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দীর্ঘ ১৬ বছর কারাগারে থাকার পর বাড়ি ফিরেছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বদরুল আলম বাদল। জামিনে বের হয়ে গত বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরেন তিনি।
বদরুল আলম হেমনগর ইউনিয়নের নবগ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাদের পরিবারে বদরুলই একমাত্র সরকারি চাকরিজীবী ছিল। আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে ২০০৫ সালে যোগ দিয়েছিলেন বিডিআরে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তার। পিলখানার ঘটনায় আসামি হয়ে চাকরিচ্যুত হন। পাঠানো হয় জেলে।
এদিকে বদরুলের আসার খবরে গ্রামের লোকজন দেখতে ভিড় করছেন বাড়িতে। তাকে ফিরে পেয়ে খুশি পরিবার ও এলাকাবাসী।
দীর্ঘ ১৬ বছর বাবার আদর থেকে বঞ্চিত একমাত্র মেয়ে সোনালী। সে এখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। র্দীঘ বছর পর বাবাকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত। সোনালী জানায়, ৪০ দিন বয়সে বাবা জেলে গিয়েছিল। ছোটবেলায় গিয়েছি জেলখানায় বাবাকে দেখতে। কিন্তু তাকে ধরতে পারিনি। বাবাকে কাছে না পাওয়ার বেদনা সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। স্কুলে যখন সহপাঠীদের বাবারা যেত তখন বাবা না থাকার অভাব বুঝেছি। বাবা এখন আমার কাছে ফিরে এসেছে এটাই বড় পাওয়া। আজ আমি খুব খুশি। তবে বাবার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। মামলা প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
এদিকে স্বামী না থাকায় এত বছর মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছিল স্ত্রী রেখা খাতুনকে। স্বামীর ফেরার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বামী ফেরায় খুশি তিনিও। তবে বিনাদোষে কারাভোগ ও চাকরি হারানোয় ক্ষতিপূরণসহ চাকরি ফেরত চেয়ে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বদরুলকে দেখতে আসা নবগ্রামের বাসিন্দা নাসির বলেন, বদরুল খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। চাকরি করে ভাগ্য ফেরাতে চেয়েছিল। কিন্তু পিলখানার ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেছে পরিবারের। জেলখানায় তাকে দেখতে যাওয়ার মতো কেউ ছিল না।
হত্যা ও বিষ্ফোরক আইনে আলাদা আলাদাভাবে দুইটি মামলা হয় বদরুলসহ কয়েকশ জোয়ানের বিরুদ্ধে। পরে হত্যা মামলা থেকে ২০১৩ সালে খালাস পেলেও বিষ্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে রাখা হয় তাকে। কারাগারে থাকার অবস্থায় ২০১৪ সালে মা আর ২০১৯ সালে মারা যায় বাবাও । বাবা ও মা মারা যাওয়ার সময় তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
বদরুল আলম বাদল বলেন, পিলখানার ঘটনার সময় ব্যারাকে থেকেও হত্যামামলার আসামি করা হয় আমাকে। করা হয় চাকরিচ্যুতও। চাকরি পুনর্বহাল, মামলা হতে অব্যাহতিসহ ১৬ বছরের পাওনাদি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।