১৭ বছরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১১:০০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০২৪

রংপুর প্রতিনিধি:

রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার ফসল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী আবু সাঈদের সাহসিকতা দৃষ্টি কাড়ে সারাদেশের। এর প্রায় তিন মাস পর আজ শনিবার বেরোবি পা রাখছে ১৭ বছরে। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দিবসের স্লোগানও তাই আবু সাঈদকে ঘিরে– ‘ধন্য বেরোবি গড়বো দেশ, আবু সাঈদের বাংলাদেশ’। আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে আবু সাঈদের বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস গড়ার প্রত্যয়।

২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষালয়টি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করে। রংপুর শহরের লালকুঠি এলাকায় সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের পরিত্যক্ত কয়েকটি কক্ষে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টির এখন রয়েছে ৭৫ একরের স্থায়ী ক্যাম্পাস। শুরুতে ছয়টি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী, ১২ শিক্ষক, তিন কর্মকর্তা ও ৯ কর্মচারীর বেরোবিতে এখন পড়ছেন প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী। ছয়টি অনুষদের অধীনে বিভাগ রয়েছে ২২টি। উচ্চতর গবেষণার জন্য এখানে রয়েছে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। নির্মাণাধীন একটি ছাত্রী হলসহ চারটি আবাসিক হল, চারটি একাডেমিক ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিসহ অন্যান্য স্থাপনা নিয়ে ১৬ বছরে অনেকটাই পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ পেয়েছে বেরোবি। পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের শীর্ষ বিদ্যাপীঠটির একাডেমিক কার্যক্রমও ঈর্ষণীয়।
দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– সকালে জাতীয় পতাকা, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক উদ্বোধন, শোভাযাত্রা, বৃক্ষরোপণ, কেক কাটা ও আলোচনা সভা। এসব আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন অন্তর্র্বতী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাদের নানা প্রত্যাশার কথা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরমান সাকিব বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয় আবু সাঈদের, সেখানে যেন কোনো বৈষম্য ঠাঁই না পায়। উত্তরের জনপদ দেখে আর কোনো বৈষম্য চাই না। নতুন আঙ্গিকে উন্নয়নমূলক কাজ হোক। আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় আরও সমৃদ্ধ হোক।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন বলেন, শহীদ আবু সাঈদকে যে ছাত্র রাজনীতি ক্যাম্পাসে গলা চেপে ধরেছিল, সেই ছাত্র রাজনীতিসহ সব ধরনের রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হোক। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্রসংসদ চালু করা হোক।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রিপন মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শব্দ যে অর্থ ধারণ করে, তেমন বেরোবি চাই। যেখানে উন্নতমানের গবেষণার পাশাপাশি থাকবে বাস্তবমুখী শিক্ষা।
রংপুরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাজ্জাক মুরাদ বলেন, রংপুরের মানুষের অনেক সাধনা আর আন্দোলনের ফসল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। একটা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে
ওঠার ক্ষেত্রে ১৬ বছর কিছুই না, তবুও এত অল্প সময়ের মধ্যে বেরোবি যেখানে পৌঁছেছে তা ঈর্ষণীয়।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কিছু সমস্যা থাকলেও শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই আন্তরিক হওয়ায় দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ সেশনজটমুক্ত হবে। শিক্ষা-গবেষণায় উন্মোচিত হবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার।