২০২১-২২ অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট সংসদে পাস
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
বৈশ্বিক মহামারি করোনা (কোভিড-১৯) মোকাবলা করে জীবন-জীবিকার ওপর প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ শ্লোগান সম্বলিত ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট আজ সংসদে পাস হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল গত ৩ জুন জাতীয় সংসদে এ বাজেট পেশ করেন। তিনি সেদিন পাওয়ার পয়েন্টে প্রস্তাবিত বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ দিক, সরকারের পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব তুলে ধরেন।
আজ বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীগণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবিগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।
এসব মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে বিরোধীদলের ১২ জন সংসদ সদস্য মোট ৬২৫টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতের ৩টি মঞ্জুরী দাবিতে আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়।
ছাঁটাই প্রস্তাবে আলোচনা করেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরােজ রশীদ, রুস্তম আলী ফরাজী, পীর ফজলুর রহমান, মজবিুল হক, রওশন আরা মান্নান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপির হারুনুর রশীদ, মোশাররফ হোসেন, রুমীন ফারহানা এবং গণফোরামের মোক্কাবির খান।
এরপর সংসদ সদস্যগণ টেবিল চাপড়িয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২১ পাসের মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন।
বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভুত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। শিল্পে, রাষ্টায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকে আর্থিক বিনিয়োগ সহায়তা, ভর্তুকি খাতে ৩৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা, সুদ পরিশোধ বাবত ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
এছাড়া বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ ১ লাখ ৭০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৮৪৭ কোটি টাকা, ভৌত অবকাঠামো খাতে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো খাতের মধ্যে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৭৪ হাজার ১০২ কোটি টাকা, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৬৯ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর বাইরে সাধারণ সেবা খাতে ১ লাখ ৪৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাজেটে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬.২শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা আহরণ করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ৩৭ হাজার ১ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এ মেয়াদের তৃতীয় বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালেরও তৃতীয় বাজেট। বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে এবার সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাজেট পেশ এবং পাস করা হয়। বাজেট পাসের সময় সংসদ সচিবালয়ের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক সংসদ সদস্য বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশন কক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আসন বিন্যাস করা হয়।
বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৫.৭ শতাংশ, পরিবহন-যোগাযোগ খাতে ১১.৯ শতাংশ, সুদ খাতে ১১.৪ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৭ শতাংশ, জনপ্রশাসন খাতে ১৮.৭ শতাংশ, প্রতিরক্ষা খাতে ৬.২ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৫.৪ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৫.৭ শতাংশ, জনশৃঙ্খখলা ও নিরাপত্তা খাতে ৪.৮ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪.৫ শতাংশ, কৃষি খাতে ৫.৩ শতাংশ, গৃহায়ন খাতে ১.১ শতাংশ, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে ০.৮ শতাংশ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস খাতে ০.৭ শতাংশ এবং বিবিধ খাতে ০.৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বাজেটে বৈশ্বিক মহামারি করোনা (কোভিড-১৯) মোকাবেলার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ সার্বিক সেবা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।