২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে কুষ্ঠমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ৬:২৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৩

মোঃ সাইফুল ইসলাম:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে কুষ্ঠ রোগ নির্মূল করার প্রতিশ্র“তি ব্যক্ত করে কুষ্ঠ রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কারখানাগুলোকে উন্নতমানের ওষুধ তৈরির আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কুষ্ঠরোগ নির্মূলে আমরা দৃঢ় অঙ্গীকার করছি। আজ রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘দ্বিতীয় জাতীয় লেপরোসি (কুষ্ঠ রোগ) সম্মেলন’ ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী অ্যাপ্রোচ টু জিরো লেপরোসি বাই ২০৩০ এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য তহবিল বৃদ্ধি করাসহ আরো সবরকম সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি দেশে উন্নতমানের যে ওষুধ কোম্পানী রয়েছে তাদেরকে কুষ্ঠরোগের ওষুধ উৎপাদনেরও আহবান জানান।
সরকার প্রধান বলেন, তার সরকার কুষ্ঠ নির্মূল কার্যক্রমকে আরো শক্তিশারী করার উদ্যোগ নিয়েছে। কুষ্ঠরোগ প্রতিরোধ করাটাই সব থেকে বেশি দরকার। কি কারণে হচ্ছে এবং এটা যেন আর না হয় সেদিকেই আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, কুষ্ঠরোগ শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য ন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক প্ল্যান ফর লেপরোসি ইন বাংলাদেশ ২০২২-২০৩০’ প্রণয়ন এবং যথাযথভাবে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হেয়েছে।
কুষ্ঠরোগীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার যে আইন করেছিল ‘দ্য লেপারস অ্যাক্ট ১৮৯৮’ তার সরকার তা রোহিত করেছে বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাজেই এখন আর কেউ কুষ্ঠরোগীদের তাদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত করতে পারবে না। পরিবার থেকে শুরু করে আশাপাশের আর কেউ তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখতে পারবে না।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। কুষ্ঠ নির্মূলের জন্য বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার শুভেচ্ছা দূত এবং জাপানের নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইয়োহেই সাসাকাওয়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাগত বক্তৃতা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কুষ্ঠরোগীদের সহানুভ‚তি ও সেবা যেমন দরকার তাদের পাশে থাকাও দরকার। তাদের মনবল সৃষ্টি করা দরকার এবং সকলে সেটাই করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেনে। এটা ছোঁয়াছে রোগ বলে পুরনো ভ্রান্ত ধারণা এক সময় যেটা ছিল সেটা থেকে সকলকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এখন অনেকেই এর থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং বের হতে হবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি এবং এবং এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলছি কাজেই এখন আর সেই পুরণো ধ্যান ধারণায় থাকলে চলবে না। তাহলে আমরা স্মার্ট হতে পারব না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ^াস করি যে আজকের এই সম্মেলনের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠ মুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণার বিদ্যমান সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হবে এবং অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা ও পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করতে পারবো।
তিনি এ সময় সকল চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ দেশের সকল নাগরিকদের কুষ্ঠরোগীদের অবহেলা না করে তাদের প্রতি সহানুভ‚তিশীল ও যতœবান হওয়ার আহবান জানান।
তার সরকার প্রতিবন্ধী, কুষ্ঠরোগী এবং তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসন ও জীবন-জীবিকার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের চাকরিতে পুণর্বাসন করা হলে ব্যবসায়ীদের কর মুক্ত রেয়াত দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আবারও মেডিকেল রিসার্চের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের মেডিকেল রিসার্চ করা খুব বেশি দরকার। মেডিকেল সাইন্সের ওপর রিসার্চ দরকার, যেটা আপনারা একটু কমই করেন। আপনারা দয়া করে যদি মেডিকেল সাইন্সের ওপর রিসার্চ করুন, তাহলে দেখবেন আমাদের দেশে জলবায়ুর সাথে সম্পর্কিত যতরকম রোগ আছে তার ওপর একটি ভাল ধারণা এনে এর যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারবো এবং সে ধরনের ওষুধ বা যা যা দরকার আমরা তৈরি করতে পারবো। এই অনুরোধটা আমার থাকলো, বলেন প্রধানমন্ত্রী। যারা কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে এসব রোগীদের যেন দূর দূর করা বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করা না হয় সে অনুরোধও করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, আমরা সবাই অবহেলা দিয়ে নয়, ভালবাসা দিয়ে আন্তরিকতা দেখিয়ে তাদের পাশে থেকে এই কুষ্ঠরোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলি। তারা আমাদেরই আপনজন।