২৪ একর দখলে রেখে সেগুন-রাবার গাছ উজাড়

প্রকাশিত: ৩:৫১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২৪

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় রুপাইছড়া রাবার বাগানের সেগুন টিলা দেখে বোঝার উপায় নেই, এক সময় এখানে বড় বড় পাহাড় ও টিলা ছিল। প্রায় দুই দশক ধরে বালু ও মাটি কেটে ধংস করা হয়েছে পাহাড়-টিলা, গাছপালা। এক্সক্যাভেটর ও ড্রেজার মেশিনে গভীর করে মাটি-বালু উত্তোলন করায় সেখানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় পুকুর। রাবার বাগানের কিছু জায়গা ইজারা সূত্রে নিজের বলে দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে এসব কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি মুদ্দত আলী।

জানা গেছে, পুটিজুরী ইউনিয়নের রুপাইছড়া সরকারি রাবার বাগান গড়ে উঠেছে ১ হাজার ৯৬৩ একর জায়গা নিয়ে। এর মধ্যে ২৩.৭৪ একর জায়গা নিজের দাবি করে প্রায় ২০ বছর দখল করে রেখেছেন চেয়ারম্যান মুদ্দত আলী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাগানের সেগুন ও রাবার গাছ কেটে উজাড় করে চলেছেন। একই সঙ্গে পাহাড়-টিলা কেটে সৃষ্টি করেছেন পুকুর। গভীর করে মাটি কেটে নেওয়ায় বাগানের গাছসহ আশপাশের টিলাও ধসে পড়ছে। বছরের পর বছর পাহাড়-টিলা উজাড় করলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় মুদ্দত আলীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেননি এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, চেয়ারম্যান মুদ্দত আলীর নিয়োজিত শ্রমিকরা রুপাইছড়া চা বাগান থেকে নির্বিচারে গাছ কাটছে। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে দিনের পরিবর্তে এখন রাতের বেলায় বাগান থেকে মাটি কেটে তা বিক্রি করা হচ্ছে। আর এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কাটার পর ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে তোলা হচ্ছে বালু। দীর্ঘদিন বালু তোলার কারণে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বিশাল গর্তের। বৃষ্টির পানি জমে এসব গর্ত পরিণত হয়েছে পুকুরে।

স্থানীয় বাসিন্দা নোয়াব আলী জানালেন, মুদ্দত আলী এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি দীর্ঘদিন রাবার বাগানের উঁচু জায়গা কেটে মাটি ও বালু তুলে অন্যত্র বিক্রি করে আসছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় কেউ প্রতিবাদের সাহস করেননি। মাটি ও বালু কেটে পরিবহন করায় এলাকার রাস্তাঘাটও ভেঙে গেছে।
ফয়সল আহমেদ ও ইব্রাহিম আহমেদ বলেন, সরকারি বাগানের কাছ কেটে পরিবেশ নষ্ট করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মুদ্দত আলী এতদিন আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করেছেন। এখন তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

রুপাইছড়া রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মুদ্দত আলী দীর্ঘদিন বাগানের ২৩.৭৪ একর জায়গা দখল করে পাহাড়-টিলা কেটে মাটি ও বালু উত্তোলন করছেন। এখন সেসব জায়গা উদ্ধার এবং মাটি-বালু কাটা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুদ্দদ আলী আত্মগোপনে থাকায় এবং ব্যক্তিগত নম্বর বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ অস্বীকার করে মুদ্দদ আলীর ম্যানেজার নুরুল আমীন বলেন, চেয়ারম্যান বৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছেন। তিনি এসব জায়গা বন বিভাগের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান জানান, এ বিষয়ে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। রুপাইছড়া রাবার বাগানের সেগুন টিলা কেটে নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।