সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় হাওর রক্ষায় ২১টি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হতে না হতেই অনিয়ম-গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভিন্ন লাইসেন্সে এবারও কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। এমনকি প্রকল্পের জন্য তৈরি করা ব্লকগুলো ব্যবহারের আগেই ভেঙে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো প্রকল্পের কাজ শুরু না হলেও অগ্রগতি দেখানো হয়েছে।
জানা যায়, বাঁধগুলো নির্মাণে গত এপ্রিল মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রকল্পগুলো হলো– ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তাহিরপুরের মাটিয়ান ও শনির হাওরের দুটি বাঁধ, ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জামালগঞ্জের পাগনার হাওর ও মহালিয়া হাওরের দুটি বাঁধ, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ধর্মপাশার ধানকুনিয়া ও সোনামোড়ল হাওরের দুটি বাঁধ এবং চন্দ্রসোনারতাল হাওরের দুটি বাঁধ, ২৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশ্বম্ভরপুরের করচার হাওর ও আঙ্গুরআলী হাওরের দুটি বাঁধ, ২০ কোটি টাকা ধর্মপাশার গুরমার হাওরের আরেকটি বাঁধ, ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মাটিয়ান হাওরের একটি বাঁধ, ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পৈন্দার বাঁধ, ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জ সদরের ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার বাঁধ, ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলার নূরপুরের বাঁধ, ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আমবাড়ির বাঁধ, ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ছায়ার হাওরের দুটি বাঁধ, ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের বাঁধ, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শান্তিগঞ্জের জামখোলা হাওরের বাঁধ, ৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে শান্তিগঞ্জের খাই হাওরের দুটি বাঁধ, ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের বাঁধ এবং ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে দোয়ারাবাজারের পেটফুলা খালে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বেশির ভাগ কাজই রাজধানী ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সরকার পতনের পর তাদের অনেকেই পলাতক থাকায় প্রকল্পের কাজ থমকে আছে। এমনকি কোনো কোনো এলাকায় প্রকল্পের সাইনবোর্ডও নেই।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা সদরের বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বলেন, নিম্নমানের পাথর, বালু ও সিমেন্টের পরিমাণ কম দিয়ে বাঁধের ব্লক তৈরি হচ্ছে। ফলে ব্যবহারের আগেই সেগুলো ভেঙে যাচ্ছে। বিষয়টি তিনি স্থানীয় অনেকের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দোয়ারাবাজারের পেটফুলা বাঁধের কাজের অগ্রগতি পাউবো দেখিয়েছে ৭৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। অথচ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুর রউফের মতে, ৪০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়নি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার করচার হাওরের রাধানগর কবরস্তান থেকে রায়পুর পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধের কাজে ২০০ ব্লক বানানো ছাড়া কিছুই হয়নি। অথচ এখানে ১৫ শতাংশ কাজের অগ্রগতি দেখিয়েছে পাউবো। দোয়ারাবাজারের নূরপুরে কয়েকশ ব্লক বানানো ছাড়া কিছুই হয়নি। অথচ অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৪৮.৬০ শতাংশ।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কোরবান নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল বরকত বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁওয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি। অথচ অগ্রগতি ১০ শতাংশ।’
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, কোনো কোনো প্রকল্পের কাজ মে মাস থেকে শুরু হয়। ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। মনিটরিং হচ্ছে। সময়মতো কাজ শেষ না হলে বা অনিয়ম-দুর্নীতির চেষ্টা হলে, ঠিকাদারের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।