নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সহযোগিতায় ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযতœ কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার প্রদান (আইসিবিসি) প্রকল্পে’ কাজ করে চলেছে টিএমএসএস। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম-১ ডোমেইনের আওতাধীন প্রকল্পটি ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার ছয়টি উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। যেখানে প্রায় ৪০ হাজার শিশুর সুরক্ষা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
টিএমএসএস শিশুর শারীরিক, সামাজিক, আবেগিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, ভাষাগত ও নৈতিক বিকাশমূলক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এরই মধ্যে দুই জেলায় কর্মরত সব প্রকল্প কর্মী, শিশুযতœ কেন্দ্রের যতœকারী, সহকারী যতœকারী, স্থানীয় সাঁতার প্রশিক্ষকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। প্রশিক্ষণে দুই হাজার ২৬৬ জন প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছেন। শিশুদের নিরাপত্তা, প্রারম্ভিক বিকাশ, যতœ, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিশুযতœ কেন্দ্র পরিচালনা, শিশুযতœ কেন্দ্রের যতœকারীর সহায়িকার কার্যাদি অবহিতকরণসহ পাঠদানের বিষয়াদি অনুশীলন এবং প্রকল্পের সুরক্ষা নীতির বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার প্রেক্ষাপটে শিশু সুরক্ষার দিকটি বিবেচনায় রেখে টিএমএসএস প্রকল্পটির মাধ্যমে শিশুদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ, শিশুদের সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং শিশু নির্যাতন বন্ধে কাজ চলছে। প্রতিটি শিশুযতœ কেন্দ্রে দুইজন প্রশিক্ষিত যতœকারী এবং সহকারী যত্নকারি শিশুদের যতœ নেওয়ার কাজটি করছেন। শিশু যতœ ও তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি কেন্দ্রগুলিতে খেলা-ভিত্তিক শিক্ষা এবং মনোসামাজিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া, প্রশিক্ষিত স্থানীয় প্রশিক্ষকরা স্থানীয় পুকুরগুলিতে (বাঁশের তৈরি অস্থায়ী পুল) পাঠ পরিচালনার মাধ্যমে শিশুদের জীবনরক্ষাকারী সাঁতার শেখার কাজও করছে।
প্রকল্পের সার্বিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে টিএমএসএস দিনের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা) ১-৫ বছর বয়সী শিশুদের বিকাশ উপযোগী সেবা দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য এই সময়কে অরক্ষিত বলে বিভিন্ন গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে। অভিভাবকরা এই সময়টিতে আয় বাড়ানো বা গৃহস্থালীর কাজে ব্যস্ত থাকেন, প্রায়শই বাচ্চাদের অযতেœ রেখে যান, যা তাদের ডুবে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের নিরাপদ সাঁতার প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে পানিতে ডুবে শিশুর অকাল মৃত্যুর হার কমাতে চেষ্টা করছে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান টিএমএসএস।
এছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিভাবকদের শিশু লালনপালন বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে প্রকল্পটি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মজীবী মায়েরা আর্থিকভাবে উপকৃত হয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে তরান্বিত করে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া সমাজের পিছিয়ে থাকা নারী সমাজ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিকভাবেও তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। আইসিবিসি প্রকল্পের অধীনে ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলায় টিএমএসএসের মাধ্যমে ৪০ হাজার শিশু সেবা পেতে সক্ষম হবে। প্রকল্পটি দেশের ১৬টি জেলায় ৪৫টি উপজেলায় একযোগে চলমান। যেখানে আট হাজার শিশুযতœ কেন্দ্রের পাশাপাশি এক হাজার ৬০০টি সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এই প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।