৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়াদের পক্ষ নিয়ে সারজিসের স্ট্যাটাস

প্রকাশিত: ২:০৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

৪৩তম বিসিএসের ভ্যারিফিকেশনে বাদ পড়া প্রার্থীদের পক্ষ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ৪৩তম বিসিএসের পুনরায় ভ্যারিফিকেশন হয়েছে। ১৬৮ জনকে এই ধাপে বাদ দেওয়া হয়েছে। ১ম ও ২য় ভ্যারিফিকেশন মিলে মোট বাদ পড়েছে ২৬৭ জন।

শনিবার পৌনে ১১টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখানো হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার নেগেটিভ রিপোর্ট, অর্থাৎ পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড। কিন্তু এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন আছে।

ভ্যারিফিকেশনে বাদ পড়াদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে আওয়ামী লীগ পরিবার ব্যতীত অন্যান্য পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা যে কারো জন্য এই প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি পাওয়া কঠিন বিষয় ছিল। একই ধরনের একটি চিত্র যদি এখন দেখা যায় তাহলে পার্থক্যটা কোথায়। যে চাকরিপ্রার্থী সে যদি নিজ যোগ্যতায় প্রিলিমিনারী, রিটেন, ভাইভা পাস করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয় এবং তার যদি পূর্বে কোনও অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকে তাহলে তার বাবা, চাচা, মামা, নানার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন। আমি কী করবো সেটা কি আমার চাচা নির্ধারণ করতে পারে, কিংবা আমার চাচা কী করবে সেটা কি আমি নির্ধারণ করতে পারি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির এই মুখ্য সংগঠক বলেন, একটা সময় পরে সবাইকে ব্যক্তিগত জীবন গোছাতে হয় ৷ ইভেন, আমার বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে আমার চিন্তা ভাবনার মিল নাও থাকতে পারে ৷ তাহলে পরিবারের কোনও একজন সদস্যের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে অন্য একজন সদস্যকে বঞ্চিত করার অধিকার রাষ্ট্র পায় কি না।

সারজিস আরও বলেন, সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটা এবার হয়েছে- গোয়েন্দা সংস্থার অনেকে গিয়ে এবার ইউনিয়ন আর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সেক্রেটারির কাছে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত চাকরিপ্রার্থীদের পরিবারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা জানতে চেয়েছে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করে সারজিস প্রশ্ন করেন, তার মানে সারা জীবন অধ্যবসায় করা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট এক মেধাবী তরুণ প্রায় ৩ বছর দিনরাত এক করে পড়াশোনা করার পর প্রিলি, রিটেন, ভাইভা পাস করে ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর কোনও এক ওয়ার্ড সভাপতি সেক্রেটারির মতামতের কাছে জিম্মি হয়ে যাবে? সে তার কর্ম নির্ধারণ করবে? তাহলে এতো আয়োজনের কী দরকার ছিল?

 

তিনি বলেন, এই ভ্যারিফিকেশন তো তাহলে প্রিলির আগে হয়ে যাওয়া উচিৎ। তাহলে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো নষ্ট হতো না। আর কোন যোগ্যতাভিত্তিতে সে এই মতামত দেয়? স্থানীয়ভাবে এমনিতেই নেতিবাচক একটা পলিটিক্স দেখা যায়, কে কারে ল্যাং মেরে উঠতে পারে! যদি একজন চাকরিপ্রত্যাশী এমন স্থানীয় পলিটিক্সের শিকার হয় তাহলে সে দায় সরকার নেবে কি না?

নিজ হলের এক অগ্রজের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমার অমর একুশে হলের জাকারিয়া ভাই এডমিন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তিনি! ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট, মাস্টার্সে সিজিপিএ চারের মধ্যে ৪! ১ম ভ্যারিফিকেশন উতরে গেলেও রি-ভ্যারিফিকেশনে বাদ দেওয়া হয়। যারা উনাকে চেনেন তাদের সবার আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা। আমি ভেবেছিলাম, আওয়ামী আমলে উনাকে আটকানো হতে পারে। কারণ উনার দাঁড়ি আছে, নূরানি চেহারা, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। জামাত-শিবির ট্যাগ দেওয়া সহজ, কিন্তু উনাকে আটকানো হলো এই অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সময়ে। এখন তো নিয়োগের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড প্রক্রিয়া নতুন করে সেট হওয়ার কথা ছিল। এটা শুধু একটা এক্সামপল, এমন আরও অনেকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে ৷

তিনি আরও জানান, পরে দেখলাম যারা বাদ পড়েছে তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন করে পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু এই ভ্যারিফিকেশন খেলা কেন। এখানে অনেকেই আছে যারা পূর্বের চাকরি ছেড়ে এসেছে, অনেকের ছিল জীবনের শেষ চাকরির পরীক্ষা, অনেকের সামনের জীবন নির্ভর করছে এই চাকরির ওপর। সেখানে যদি এমন রিয়েলিটি সেট করা হয় তবে যে প্রজন্ম আগামীর চাকরিপ্রার্থী তারা আপনাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবে না, দোদুল্যমান অবস্থায় না থেকে দেশ ছেড়ে চলে যাবে। অলরেডি এটা নিয়ে কথা শুরু হয়েছে ৷ যেটা কখনোই কাম্য নয়।

সবশেষে তিনি বলেন, চাকরি হবে মেধার ভিত্তিতে। যে মতাদর্শেরই হোক না কেন, যদি পূর্বে ক্ষমতার অপব্যবহার, অন্যায়, অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকে তাহলে নাগরিক হিসেবে সরকারি চাকরি পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার। কোনও অহেতুক এক্সকিউজে সেটা ক্ষুণ্ণ করা কখনোই ভালো বার্তা বহন করে না।