৫০ জনের জমি দখল করেন মমিন, প্রতিবাদ করলেই আসামি

প্রকাশিত: ৫:০৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ 

লক্ষ্মীপুরে জাল দলিলের মাধ্যমে ৫০ জনের অন্তত ৫০ একর জমি দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে মমিন উল্যা নামের একজনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই মামলার আসামি হতে হয়। তার হয়রানিমূলক মামলায় জিম্মি ভুক্তভোগীরা।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মিয়ারবেড়ি বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগীরা এসব অভিযোগ করেছেন। পরে বাজারে তারা মমিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা মোক্তার হোসেন বিপ্লব, লাহারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মুরাদ, ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শিপন, মিয়ারবেড়ি বাজার পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি আবুল হাশেম, সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক জসিম উদ্দিন, ভুক্তভোগী নুর আলম, মো. মোস্তফা, আলী আজম, অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান ও দেলোয়ারা বেগমসহ অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযুক্ত মমিন ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব চরমনসা গ্রামের সফি উল্লাহর ছেলে। স্থানীয় মিয়ারবেড়ি বাজারে তার একটি দোকান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মমিনের অন্যায় প্রতিবাদ করলেই তিনি চোখ রাঙান। ইতোমধ্যে সাজানো কয়েকটি মামলায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ অন্তত ৩০ জনকে আসামি করেছেন। তার কূটকৌশল, হয়রানির শিকার গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। মমিন সক্রিয় কোনো রাজনীতি না করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরও দৌঁড়ের ওপর রাখেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

ভুক্তভোগী দেলোয়ারা বেগম বলেন, মিয়ারবেড়ি বাজারে আমি ভিটাসহ সাতটি দোকানঘর কিনি। ওই ঘরগুলো মমিন জোরপূর্বক দখল করতে যায়। দখলে নিতে না পেরে তিনি পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় তিনি আদালতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন ৫০ জনের জমি দখল করেন মমিন, প্রতিবাদ করলেই আসামি

ভুক্তভোগী অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান বলেন, মমিন মামলাবাজ ও ভূমিদস্যু। আদালতকে ভুল বুঝিয়ে বিভিন্ন ডিক্রি নিয়ে মানুষের জমি দখল তার কাজ। আমাদের এক একর ৭১ শতাংশ জমির জাল দলিল করে তিনি দখল করার চেষ্টা করছেন। জনগণ তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। আমরা আদালতসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেবো।

মিয়ারবেড়ি বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, মামলাবাজ মমিন বহু মানুষের সঙ্গে জমি ও টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন। এসব নিয়ে কথা বলায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মানুষকে হয়রানি করছেন। বাজারে একটি দোকানের ভিটা কিনতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছে। বাজার কমিটির সহ-সভাপতি আবুল হাশেমকেও মামলায় জড়ানো হয়েছে। তার থেকে বাঁচতে আমরা জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর কাছে যাবো। মানুষের মালিকানাধীন অন্তত ৫০ একর জমি ভুয়া দলিলের মাধ্যমে তিনি দখল করে রেখেছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে মমিন উল্যা বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ তোলা হয়েছে। যুবলীগ নেতা জসিম আমার দোকানে এসে হামলা চালিয়েছে। আমি ও আমার ছেলেকে মারধরসহ দোকান থেকে তিনি তিন লাখ টাকা নিয়ে গেছে। এসব ঢাকতেই এখন আমার বিরুদ্ধে সবাই অবস্থান নিয়েছে।

ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, মমিনের বিরুদ্ধে পরিষদে বহু ভুক্তভোগীর অভিযোগ রয়েছে। তিনি ‘স্বীকৃত ভূমিদস্যু’। ভুয়া দলিল করে মানুষের জমি অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। জমি কিনেও তার প্রতারণার কারণে অনেকে এখনো সেটি বুঝে পাননি।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, ঘটনাটি কেউ আমাকে জানায়নি। কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে