ফেনীতে ১০ মাসে সড়কে প্রাণ হারিয়েছে ৪৬ জন

প্রকাশিত: ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২৪

ফেনী প্রতিনিধি:

ফেনী সরকারি কলেজের স্নাতক ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান মাসুদ (২২)। স্বপ্ন পূরণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পাড়ি জামানোর কথা ছিল প্রবাসে। তবে তার আগেই রোববার (২০ অক্টোবর) শহরের খাজুরিয়া রাস্তার মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে তার মৃত্যু হয়।

শুধু মাসুদই নন, এমন আরও অনেক ঘটনার চিত্র দেখা যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ২৬ কিলোমিটার ও ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসেই এ সড়কে প্রাণ হারিয়েছে ৪৬ জন। বেপরোয়া গতি, চাঁদাবাজি ও ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

জেলা পুলিশ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ৪৩টি। সাধারণ ডায়রি হয়েছে ৫টি।

ফাজিলপুর ও মহিপাল হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফাজিলপুর অংশে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯টি দুর্ঘটনার তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। এতে ১৮ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। সড়কে বিভিন্ন অপরাধে ১ হাজার ৭২৬টি মামলা দেওয়া হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৪টি সিএনজি অটোরিকশা। এছাড়া মহিপাল হাইওয়ে থানার আওতাধীন এলাকায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন প্রাণ হারিয়েছে। এসব ঘটনায় ১৯টি মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৭টি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে বেশিরভাগই পথচারী, কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন।

কথা হয় হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাসুম সরদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে স্পিডগানের মাধ্যমে গাড়ির গতি পরীক্ষা করা হয়। অতিরিক্ত গতিতে চলাচলকারী গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

সড়কে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এতে পুলিশ সদস্যের চাঁদাবাজি করা কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া পুলিশের বডি ওর্ন ক্যামেরাও রয়েছে।

একই প্রসঙ্গে মহিপাল হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। জনগণ সচেতন না হলে দুর্ঘটনা রোধ করা অসম্ভব। মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ দমনে জনবল সংকট রয়েছে। চালক হয়রানি ও ক্যাশিয়ার নিয়োগ করে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে অস্বীকার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে ফাজিলপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, মহাসড়কের এ অংশে পথচারী পারাপার ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। দুর্ঘটনারোধে ডোপটেস্ট ও স্পিড গান ব্যবহার করা হচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ফেনী জেলার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান দারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত চালক দায়ী। চালকের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকা, শিক্ষার অভাব, সড়কে যানচলাচলে ব্যবহৃত চিহ্নগুলো না চেনা দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, আঞ্চলিক সড়কে বেপরোয়া অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা, যাত্রীদের অসচেতনতা ও চালকদের বেপরোয়া গতির মানসিকতায় দুর্ঘটনা বাড়ছে।

দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে করণীয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিসচার সাধারণ সম্পাদক বলেন, অস্থায়ী কার্যালয়ে চালকদের তথ্যগত প্রশিক্ষণ নিয়মিত চলছে। চালকদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা গেলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে। তাদের বলা হয়ে থাকে, পথচারী সচেতন নয়, এটি বিবেচনায় রেখেই সড়কে গাড়ি চালাতে হবে। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের যথাযথ নজরদারি থাকলে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর এ দিনটি জাতীয়ভাবে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য-‘ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অঙ্গীকার, নিরাপদ সড়ক হোক সবার’।