গুলিতে ৩৭ মামলার আসামি বাবলা বাহিনীর প্রধান নিহত

প্রকাশিত: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২৪

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের গুলিতে ৩৭ মামলার পলাতক আসামি উজ্জ্বল খালাসী ওরফে বাবলা (৪২) নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের মল্লিকের চরে প্রতিপক্ষ নয়ন গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন তিনি। পদ্মা ও মেঘনা নদীপথের আতঙ্ক পলাতক আসামি বাবলা নৌ ডাকাত দল বাবলা বাহিনীর প্রধান ছিলেন বলে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, লুণ্ঠিত বিভিন্ন সামগ্রীর ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মল্লিকের চরে সংঘর্ষের পর একটি ভবনে দুই কক্ষে আটকে রাখা ডাকাত দলের ৯ সদস্যসহ ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত বাবলা চাঁদপুর জেলার উত্তর মতলব এলাকার বাচ্চু খালাসীর ছেলে বলে জানা গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রত্যন্ত অঞ্চল মল্লিকের চরে মঙ্গলবার সকালে বন্দুকযুদ্ধের সময় গুলিতে বাবলা নিহত হন। এ সময় গুলিবিদ্ধ রহিম বাদশাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং আহত স্থানীয় বাসিন্দা আক্তার হোসেন ও লিটন মিয়াজীকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা এবং তাদের ব্যবহৃত স্পিডবোটও জব্দ করা হয়েছে। মল্লিকের চরকে আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করত নৌ ডাকাত দল।

নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন ও ডাকাতি করা অর্থ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয় বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। তাদের ভাষ্য, সোমবার রাতে মল্লিকের চরের রহিম বাদশা নামে স্থানীয় প্রভাবশালীর বাড়িতে ছিলেন বাবলা। এ বাড়ি থেকেই তিনি দলবল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নৌ ডাকাতি, বালু উত্তোলন, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। এক মাস ধরে কালিরচর ও গুয়াগাছিয়া এলাকায় বালু উত্তোলন নিয়ে অপর নৌ ডাকাত দল নয়ন, পিয়াস, রিপন পক্ষের লোকজনের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব চলছিল।

বৈধ ইজারাদারদেরও চাঁদা দিতে হতো বাবলাকে। এ ছাড়া মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বাবলার সঙ্গে রহিম বাদশা ও ইমাপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন পক্ষেরও দ্বন্দ্ব চলছিল। সে দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিনের ভাষ্য, মল্লিকের চর এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে বাবলার সঙ্গে নয়ন গ্রুপের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জেরেই মঙ্গলবার সকালে নয়ন গ্রুপ হামলা চালায়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে বাবলা নিহত হন।

স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, চরের রহিম বাদশার দ্বিতল ভবনে এ সংঘর্ষ হয়। গুলির শব্দ শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে দুটি ট্রলারে করে দু’দল পালিয়ে যায়। এ সময় ভবনটিতে থাকা ৯ জনকে তালাবদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা। পরে তালা ভেঙে পুলিশ তাদের আটক করে। পালিয়ে যাওয়া সদস্যদের মধ্যে পাঁচজনকে উপজেলার হোসেন্দি এলাকা থেকে ধরা হয়েছে।

বাবলার মৃত্যুর খবরে উল্লাস প্রকাশ করেছেন গজারিয়া ও মুন্সীগঞ্জ সদরের আধারা ইউনিয়নের কালিরচরসহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। বাবলার গুলিতে নিহত ব্যবসায়ী উজ্জ্বল মিয়াজীর পরিবারের সদস্যরাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন হত্যা মামলার বাদী কিবরিয়া মিয়াজী।

মুন্সীগঞ্জ, গজারিয়া, মতলব, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে বাবলা সশস্ত্র নৌ ডাকাত দল গড়ে তোলেন জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে নদীপথে চলাচলরত বিভিন্ন ধরনের নৌযান ও জেলেদের নৌকায় চাঁদাবাজিসহ লুটপাটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল এ বাহিনী। বাবলার নেতৃত্বে মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে বিভিন্ন সময় অসংখ্য নৌ ডাকাতি ও হত্যার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানিয়েছে, পদ্মা ও মেঘনা নদীপথের আতঙ্ক নিহত বাবলা ওরফে উজ্জ্বল খালাসীর বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে চাঁদপুর থানায় আটটি, মুন্সীগঞ্জ সদরে ২২টি, নারায়ণগঞ্জে চারটি ও শরীয়তপুরে তিনটিসহ ৩৭টি মামলা রয়েছে।