ক্রীড়া ডেস্ক:
৪২ মিনিটেই তিন গোল। হয়তো অনেকের কাছে এটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু কাঠমান্ডুর রঙ্গশালায় এমন অলীক স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ দিয়েছেন সাবিনা খাতুন-আফেদা খন্দকাররা। দক্ষিণ এশিয়ান নারী ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি ভারতের বিপক্ষে শৈল্পিক ফুটবল আর চমৎকার বোঝাপড়ায় ঋতুপর্ণা চাকমা-তহুরা খাতুনদের তিকিতাকার ছন্দটা মোহিত করেছে সবাইকে। কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে সিনিয়রদের দ্বন্দ্বে নারী দলে যেখানে বিভক্তির সুর, সেখানে দশরথের সবুজ গালিচায় বাংলাদেশের মেয়েদের পায়ে ফুটেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া।
বাইরের বিতর্ক ভুলে গিয়ে বুধবার অন্য এক বাংলাদেশকে দেখা গেছে হিমালয়ের দেশে। দুই বছর আগে যেই মঞ্চে ভারত জুজু কাটিয়েছিল, গতকাল সেখানেই প্রতিবেশী দেশকে টানা দ্বিতীয়বার হারের যন্ত্রণা দিয়েছেন মাশুরা পারভিন-রুপনা চাকমারা। নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্রয়ের ধাক্কা সামলে ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ শুধু সেমিফাইনালের টিকিটিই নিশ্চিত করেনি, হয়েছে গ্রুপ ‘এ’র সেরা। ম্যাচসেরা তহুরা খাতুনের জোড়া গোলের সঙ্গে নিজের অভিষেক সাফে লক্ষ্যভেদ করেন আফিদা খন্দকার। দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট বাটলারের দলের। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট পাওয়া ভারত হয়েছে গ্রুপ রানার্সআপ। ১ পয়েন্টের প্রাপ্তিতে বিদায় নিয়েছে পাকিস্তান। ২৭ অক্টোবর প্রথম সেমিফাইনালে বাংলাদেশ খেলবে গ্রুপ ‘বি’র রানার্সআপ দলের বিপক্ষে।
শুরুর একাদশে মাশুরা পারভিন আর মারিয়া মান্ডাকে নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশ গতকাল শুরু থেকেই দারুণ ফুটবল খেলে। ছোট ছোট পাসে আক্রমণে ওঠা বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সোনালি সময়টা যেন ফিরে আসে এদিন। মধ্যমাঠের শিল্পী ঋতুপর্ণা চাকমার পায়ের জাদুতে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা বোকা বনে যান। তাঁর সঙ্গে মনিকা-মারিয়ার যুগলবন্দিতে মাঝমাঠ ছিল বাংলাদেশের দখলে। গোলপোস্টের নিচে রুপনা চাকমা হয়ে ওঠেন প্রাচীর দেয়াল। রক্ষণ, মধ্যমাঠ এবং আক্রমণভাগ– তিন বিভাগেই নিখুঁত ফুটবল খেলা বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ম্যাচের ১৮ মিনিটে। সাবিনার উড়ন্ত কর্নারে ভারত গোলরক্ষক পান্থু চানু ফিস্ট করলেও বক্সের মধ্যে বল চলে যায় আফিদার পায়ে। ঠান্ডা মাথায় ডান পায়ের শটে বল জালে পাঠান প্রথমবার সাফ খেলতে আসা আফিদা। অথচ তাঁর সেরা একাদশে থাকার কথায়ই ছিল না। ২৯ মিনিটে ঋতুপর্ণার ক্রস থেকে তহুরা খাতুনের গোলে বাংলাদেশ শিবিরে বেড়ে যায় আত্মবিশ্বাস।
৪২ মিনিটে এই তহুরার বুলেট গতির শট ফেরানোর কোনো সাধ্য ছিল না ভারত গোলরক্ষকের। দুই মিনিট পর রুপনা লাফিয়ে বলের নাগাল পেলেও গ্লাভসে জমাতে পারেননি। আলগা বল হেডে জালে পাঠান ভারতের বালা দেবী।
প্রথমার্ধে ৩-১ গোলে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ বিরতির পর কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে। এই সুযোগে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া ভারত একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে। কয়েকবার নিশ্চিত গোল থেকে দলকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক রুপনা। ম্যাচের প্রথম ভাগে যেখানে হয়েছে চার গোল, পরের ৪৫ মিনিটে হয়নি কোনো গোল। বলতে গেলে এই অর্ধে ভারতকে আটকে রাখার যে কৌশল নেন কোচ বাটলার, তাতে তিনি সফল। তাই তো রেফারির শেষ বাঁশি বাজার পর ইংলিশ এ কোচের উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই ছিল। এই জয়ে হয়তো ভুলে যাবেন মনিকা চাকমার ‘সিনিয়রদের না নেওয়ার’ সেই বোমা ফাটানো মন্তব্যটি।
বাংলাদেশ এখন টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে ওঠার অপেক্ষায়। ২০২২ সালে প্রথমবার নারী সাফের শিরোপা জেতার পথে রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে গ্রুপ পর্বে হারিয়েছিল মেয়েরা। এবারও তার পুনরাবৃত্তি ঘটায় শিরোপার স্বপ্ন দেখতেই পারেন সানজিদা-তহুরারা।