চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
সন্তানের পিতৃপরিচয় আদায়ে অদম্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের এক মা। চার বছর ধরে এক আদালত থেকে ছুটছেন অন্য আদালতে। আইনি লড়াই করেছেন উচ্চ আদালতেও। তবুও হার মানেননি তিনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ টেস্ট করানোর পর শিশুটিকে আইনজীবী পল্টন দাশের সন্তান হিসেবে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু তা না মেনে ওই ব্যক্তি হাইকোর্টে যান, সেখান থেকে আপিল বিভাগে। সিআইডি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপসাতালকে পৃথকভাবে ডিএনএ টেস্ট করে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। সেই প্রতিবেদনেও শিশুটি পল্টনের সন্তান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এত কিছুর পরও নিজ সন্তানকে স্বীকৃতি না দিয়ে এবার আত্মগোপনে চলে গেছেন পিতা।
চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত মঙ্গলবার অনুপস্থিত থাকেন তিনি। তিনটি ডিএনএ রিপোর্ট পর্যালোচনা করে হাজির না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করেন আদালত। আর তাতেই নারী ও শিশুটি ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা দেখছেন। পল্টন দাশ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পশ্চিম সরফভাটা গ্রামের অ্যাডভোকেট বঙ্কিম চন্দ্র দাশের ছেলে। ভিকটিম নারী পল্টনের পূর্বপরিচিত।
ওই নারী বলেন, ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম আইন কলেজে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় আমার সঙ্গে আইনজীবী পল্টন দাশের পরিচয় হয়। পারিবারিক জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নিতে তাঁর কাছে প্রায়ই যেতাম। সেই সুবাদে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং এক পর্যায়ে তা প্রেমে গড়ায়। তিনি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি তাঁকে জানালে বিয়ে নিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এদিকে গর্ভের সন্তান বড় হওয়ায় সামাজিকভাবে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছিল। ৬ মাসের সময় তাঁর পরিবারকে জানাই। কিন্তু তারা কোনো সমাধান দিতে পারেননি। ৭ মাসের মাথায় আইনজীবী সমিতিতে অভিযোগ দিলে তারাও সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়। পরে আদালতে মামলা করে সন্তানের পিতৃপরিচয় আদায়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।
ঢাকা সিআইডির ডিএনএ পরীক্ষক দীপংকর দত্ত জানান, ডিএনএ পরীক্ষায় সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত– পল্টন দাশই কন্যা শিশুটির জৈবিক পিতা। যদিও আসামির আইনজীবী রনাঙ্গ বিকাশ বলেন, পল্টন দাশ ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি এ ঘটনায় কোনোভাবেই জড়িত নন। ডিএনএ রিপোর্ট পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর আদালতে দাখিল করা ঢাকা সিআইডি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব থেকে পাঠানো দুটি পৃথক ডিএনএ টেস্ট রিপোর্টে কন্যা শিশু সন্তানকে ওই ব্যক্তির জৈবিক পিতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তারপরও পল্টন কন্যা শিশুর পিতার স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে আসছেন।
এ নিয়ে ২০২১ সালের ৬ জুন চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানায় পল্টনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন ওই নারী। পরে ১০ জুন গ্রেপ্তার হন পল্টন দাশ। গ্রেপ্তারের ১৩ দিন পর জামিনে মুক্তি পান। ডিএনএ টেস্ট করে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দেন।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রামের আদালত ভবনের পাশে আইনজীবী দোয়েল ভবনের সপ্তম তলার ৭১৮ নম্বর কক্ষসহ নগরীর বিভিন্ন হোটেলে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। তার ফলে ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। পল্টন দাশকে অভিযুক্ত করে সাতজনকে সাক্ষী করা হয়। চার্জশিট আমলে নিয়ে ৬ মার্চ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ফের পল্টনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে স্থানান্তর করেন। পরে অধিকতর ডিএনএ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে কারামুক্ত হন। ডিএনএ রিপোর্ট আসার পর এখন তিনি পলাতক।