নিজস্ব প্রতিবেদক:
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের বিবৃতি পড়ে ‘খুবই বিচলিত’ বোধ করছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।
তিনি বলেছেন, ‘নিয়তির কি নির্মম পরিহাস যে ছাত্র সংগঠন ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলার মানুষের সকল লড়াই সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলো সেই ছাত্রলীগ তারই অপকর্মের জন্য নিষিদ্ধ হলো।’
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসব কথা লিখেন সোহেল তাজ।
হত্যা-নির্যাতন-ধর্ষণ-যৌন নিপীড়ন এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার দায়ে বুধবার (২৩ অক্টোবর) ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে গেজেট জারি করেছে অন্তর্র্বতী সরকার। নিষিদ্ধ ঘোষণার পর একটি বিবৃতি দেন আত্মগোপনে থাকা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
ওই বিবৃতি পড়ে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ তার ফেসবুকে লেখেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর তাদের একটা বিবৃতি পড়ে আমি খুবই বিচলিত হলাম যেখানে তারা বলছে তাদের অতীত ভূমিকার কথা। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফাসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের অবদানের কথা বলছেন নির্লজ্জের মতো। আমি ওনাদেরকে বলব আপনারা এই সব কথা বলা থেকে দয়া করে বিরত থাকুন। কারণ আপনারাই ছাত্রলীগকে গত ১৫ বছর হত্যা/ধ্বংস করে একটি গুন্ডা সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করেছেন। ছাত্র/জনতা গণঅভুত্থানে জনগণের সাথে না থেকে এই সংগঠনকে ব্যবহার করা হয়েছে হিংস্রভাবে মানুষ হত্যা এবং নির্যাতনের হাতিয়ার হিসাবে। এই দায় কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না।’
‘বর্তমান ছাত্রলীগ এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ আর স্বাধীনতা সংগ্রামের ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই এক না’ উল্লেখ করে সোহেল তাজ লেখেন, ‘তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস টেনে এই জাতির গর্বের স্থানগুলোকে বিতর্কিত করার অধিকার আপনাদের নাই।’
সবশেষে সোহেল তাজ লেখেন, ‘ছাত্রলীগ/আওয়ামী লীগের ব্রেইন ওয়াশড, নষ্ট পচা, নীতি/আদর্শ বিচ্যুত, লুটেরা, খুনি, হত্যা, গুম, নির্যাতনকারীদের সমর্থক সকলকে বলবো অনতিবিলম্বে আমার এই ফেসবুক পেইজটি আনফলো করতে। আর অনুরোধ থাকবে নিজের বিবেককে জাগিয়ে আত্মউপলব্ধি আত্মসমালোচনা করে অনুশোচনা করার
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়েছে, যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এতৎসম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।
যেহেতু ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে যে, ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।