মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে শুকুরিয়ার চরে একটি সশস্ত্র গ্রুপের দৌরাত্ম্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে অধিবাসীরা। ভয়ে চর ছেড়েছে ৫০টি পরিবার। মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা।
উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল শুকুরিয়ার চর। এই চরে দুটি পৃথক স্থানে বসবাস করে ৭০টি পরিবার। ২৫-৩০ জনের একটি সশস্ত্র চরমপন্থি গ্রুপ চরবাসীর কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। সম্প্রতি চরমপন্থিদের ভয়ে পুলিশের সহায়তায় বাড়িঘর ছেড়ে ৫০টি পরিবার অন্য স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। চরজুড়ে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।
গত সোমবার শুকুরিয়ার চরে গিয়ে কথা হয় এখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে। চরমপন্থিদের ভয়ে নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, গত বছর থেকেই এই চরে পাবনার একটি চরমপন্থি গ্রুপ হানা দিত। তারা জেলেদের কাছ থেকে প্রায়ই চাঁদা নিত। এ চরের একই স্থানে ৫০টি পরিবার ও অন্য স্থানে ২০টি পরিবারের বসবাস। ১৫-১৬ দিন আগে হঠাৎ পাবনার চরমপন্থি নেতা জুলহাসের নেতৃত্বে সশস্ত্র দলটি চরে এসে নিজেদের আস্তানা গাড়ে। তারা মাঝেমধ্যে কয়েক দিনের জন্য চরে অবস্থান করে আবার চলে যায়। তারা চরের মাতবর রহিম শেখের (ছদ্মনাম) কাছে প্রতিটি পরিবারের জন্য ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করে। চাঁদা না দিলে তাঁকে হত্যার হুমকি দেয় তারা। এতে চরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চাঁদা না দিলে ফসলের মাঠে যেতেও বাধা দেওয়া হয়। কয়েক দিন আগে খেতে হালচাষের সময় এক ট্রাক্টরচালককে মারধর করে তারা। বাধা দেওয়া হয় নদীতে মাছ শিকারেও।
চরের মাতবর জানান, চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় সশস্ত্র গ্রুপটি তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে বাধ্য হয়ে তাদের ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু এর পরও বন্ধ হয়নি অত্যাচার। ফের চাঁদা দাবি করা হয় ৫ লাখ টাকা। এর পরই বাড়িঘরে তালা দিয়ে গবাদি পশু ও পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রাম ছেড়েছেন তিনিসহ চরের বাসিন্দারা।
ভুক্তভোগী এক নারী জানান, চরমপন্থি দলের সবার হাতেই ছোট-বড় আগ্নেয়াস্ত্র থাকে। তারা অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখায়। তাদের খাওয়ার জন্য ভাত-খিচুরি রান্না করে দিতে হয়। কখনও সারাদিন, কখনও সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অবস্থান করে চরে। পরিবারের নারী সদস্যদের নিয়ে খুবই নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় চলে গিয়েছেন।
আরেক নারী জানান, তাঁর ১২ বছরের ছেলেকে তুলে নিতে চেয়েছিল চরমপন্থিরা। এর পর তাঁকেও মেরে ফেলার ভয় দেখায়। পরদিনই কিছু জিনিসপত্র নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। পরে পুলিশের সহায়তায় বাড়ির গবাদি পশু অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়নের এক জনপ্রতিনিধি জানান, বছর পাঁচেক আগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৭ জেলার ৬ শতাধিক চরমপন্থি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছিল। এর পর থেকে পাবনা, কুষ্টিয়া ও সিরাজগঞ্জ এলাকার চরমপন্থিদের আনাগোনা বন্ধ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কয়েকটি গ্রুপ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সম্প্রতি পাবনার চরমপন্থি নেতা জুলহাসের দল চরে আসে। ১০-১২ দিন আগে চরে পুলিশের সহযোগিতায় ও আলোকদিয়া থেকে ২০০ গ্রামবাসী ওই চরে গিয়ে বাসিন্দাদের উদ্ধার করে। এ সময় ৫০টি পরিবার তাদের গবাদি পশু, জিনিসপত্র নিয়ে নৌকায় অন্য জায়গায় চলে যায়। এখন ওই এলাকায় শুধু কয়েকটি পরিবার ও তাদের গবাদি পশু রয়েছে।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) বশির আহমেদ জানান, পুলিশ ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছে। পাবনার আমিনপুর এলাকার একটি গ্রুপ চরের মানুষকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে টহল পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। মূলত চরের একটি বিল দখলকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই গ্রুপের নেতা জুলহাসসহ কয়েকজনের নাম জানা গেছে। বিষয়টি পাবনা জেলা পুলিশকেও জানানো হয়েছে।