নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইউনিসেফের তথ্যমতে, দেশে ৫১ শতাংশ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার। দরিদ্রতা, পারিবারিক অসচেতনতা, ভৌগোলিক অবস্থান, ধর্ম ও সামাজিক কুসংস্কারের কারণে দেশে এখনও বাল্যবিয়ের হার বেশি। শিক্ষার অগ্রগতির সঙ্গে বাল্যবিয়ে কমে এলেও জলবায়ু পরিবর্তন ও কভিড-১৯ মহামারি এ অর্জনে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে নির্মূল করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তরুণদের ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ‘বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ: পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বাল্যবিবাহ নিরসনে তরুণদের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তাসলিমা ইয়াসমিন। বাল্যবিয়ে নিরসনে তরুণদের ভূমিকা ও বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রফেসরিয়াল ফেলো এবং ফেমিনিস্ট ইকোনমিস্ট জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য এম নিয়াজ আব্দুল্লাহ।
অনলাইনে যুক্ত হয়ে করণীয় নিয়ে মতপ্রকাশ করেন সাজেদা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাডভাইজার ড. সাজেদা আমিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের আইনজীবী মাসুদা আক্তার, স্বর্ণ কিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফারজানা ব্রাউনিয়া, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোবাসসারা করিম মিমি ও শিক্ষার্থী ফারহানা হোসেন, বাংলাদেশ উইমেন হেলথ কানেকশনের শরীফ মোস্তফা হেলাল। স্বাগত বক্তব্য দেন ব্লাস্টের সহকারী পরিচালক তাপসী রাবেয়া।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, তরুণদের মধ্যে আমরা অনেক সম্ভাবনা দেখছি। সামাজিক সংস্কারের জায়গায় কাজ করতে হবে। ঝুঁকিগুলোও আমাদের দেখতে হবে। তিনি বলেন, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা কোথায়, তা খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বড় ভূমিকা থাকে। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি মেয়েদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে হবে।
মোবাসসারা করিম মিমি বলেন, পারিবারিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। এখনও অনেক বাবা-মা মনে করেন, মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিলে পুণ্য হয়। শিক্ষার্থী ফারহানা হোসেন জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার পর তাঁরই বিয়ের প্রস্তাব আসে। তাঁর পবিবার তখন পাত্রপক্ষকে বোঝায়– মেয়ে ছোট; বিয়ে দেবে না। কিন্তু অনেক পরিবার আছে যেখানে তারা মেয়ের পাশে দাঁড়ায় না। মেয়ের সম্মান রক্ষা কিংবা নিরাপত্তার জন্য বাল্যবিয়ে দেয়।
ব্লাস্টের হালিমা আক্তার বলেন, এখন ছেলেমেয়েরা নিজেরাও বাল্যবিয়ে করে। সে ক্ষেত্রে পরিবারের কিছু করার থাকে না। ড. সাজেদা আমিন বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মের সুযোগের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করা। সচেতনতা বাড়ানো ও আইনের প্রয়োগ করা। এটা বোঝাতে হবে বাল্যবিয়ে শুধু মেয়ের বা মেয়ের পরিবারের ক্ষতি নয়, সমাজ তথা রাষ্ট্রের ক্ষতি।
শরীফ মোস্তফা হেলাল বলেন, অনেক চেষ্টা করে আমরা বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে বিশেষ বিধান বাদ দিতে পারিনি। শিশুদের স্বপ্ন দেখাতে হবে। তাদের সামনে রোল মডেল দাঁড় করাতে হবে, যেন তারা নিজের স্বপ্ন পূরণে আগ্রহী হয়। ফারজানা ব্রাউনিয়া বলেন, মেয়েদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।