গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
অটোভ্যান চালিয়ে সংসার চলত বিধান চন্দ্রের। ঘরে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী কমলী রানী। অটোভ্যান চার্জ দিতে গিয়ে প্রথমে বিদ্যুতায়িত হন বিধান চন্দ্র। এ সময় তাঁকে জড়িয়ে ধরেন কমলী। অনাগত সন্তানের মুখ দেখার আগেই বিদ্যুৎস্পর্শে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এ দম্পতি। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৬ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার খোলামণ্ডলের গ্রামে।
প্রতিবেশী লিখন মিয়া জানান, এ দম্পতির কৃষ চন্দ্র নামে চার বছরের সন্তান আছে। তার দেখাশোনার আর কেউ রইল না।
গত রোববার কোনাপাড়া গ্রামের মহর আলীর ছেলে গফুর আলী এবং বুধবার মিরপুর গ্রামের পণ্ডিত চন্দ্রের ছেলে দিপু চন্দ্র বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যান। শুধু এই চারজনই নন, বিদ্যুৎস্পর্শে গত দেড় বছরে উপজেলায় ১০ জন মারা গেছেন। অন্যরা হলেন জয়েনপুর গ্রামের আবদুল গণি মিয়ার ছেলে আল-আমিন মিয়া (২৫), পাতিল্যাকুড়া গ্রামের সুপ্রাভ চন্দ্রের ছেলে মানিক চন্দ্র (২২), হিঙ্গারপাড়া গ্রামের আবদুল গাফ্ফার মিয়ার ছেলে নায়েব আলী (৫৫), শ্রীরামপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী শাহিদা বেগম (৩০), সদরপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে হিরু মিয়া (৩২) ও বৈষ্টব দাস গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে মতিয়ার রহমান (৪৫)। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও থানা থেকে এসব মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সাদুল্লাপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু কামাল বলেন, এসব মৃত্যুর ঘটনায় পৃথকভাবে ইউডি মামলা হয়েছে। অধিকাংশ মৃত্যুই অসচেতনতার কারণে ঘটেছে। দুর্ঘটনাগুলো বেশি ঘটেছে বৃষ্টি অথবা বন্যার সময়। বাড়িঘরে অথবা আশপাশে বৈদ্যুতিক কাজ করার সময় দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে।
পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাদুল্লাপুর শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা। সংযোগ নেওয়ার সময় ধনাঢ্য পরিবারগুলো উন্নতমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। দক্ষ টেকনিশিয়ানের সহায়তা নেন। একটু অসচ্ছল পরিবার স্বল্পমূল্যের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।
সাদুল্লাপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নুরুল সামছুল হুদা বলেন, অসচ্ছল পরিবারের কাঁচা বাড়িঘরে সঠিকভাবে ওয়্যারিং সম্পন্ন হয় না। অনেকে মেইন সুইচ ব্যবহার করে না। কিছু গ্রাহক অন্য বাড়ি থেকে সংযোগ নেয়। এগুলো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বৃষ্টি-বন্যার সময় মাটি ভেজা থাকে। এ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। অনেকেই বৈদ্যুতিক তারে কাপড় শুকানো, ভেজা হাতে তার-সুইচ স্পর্শ করে থাকেন। এটা করা যাবে না। যে কোনো বৈদ্যুতিক কাজে টেকনিশিয়ানের সহায়তা নিতে হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুরঞ্জন কুমার সরকার বলেন, বিদ্যুৎস্পর্শে দ্রুত মৃত্যু ঘটে। এখান থেকে ফেরার সম্ভাবনা কম। কেউ ফিরে এলেও শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। তাই বৈদ্যুতিক কাজে সতর্ক থাকাই উত্তম।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনজনিত কারণে মৃত্যু হলে দরিদ্র পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার নিয়ম আছে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নে আবেদন করতে হবে। তবে অনেকেই বিষয়টি জানেন না।