রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
মা ইলিশ রক্ষায় গত ১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ইলিশ ধরা, বিক্রি, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে জেলেরা যেন নিষেধাজ্ঞা থোড়াই কেয়ার করছেন। প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযান তথা নজরদারির সুযোগ নিয়ে গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতে মা ইলিশ শিকারের রীতিমতো উৎসব চলছে। এসব ইলিশ বিক্রির জন্য পদ্মাপাড়েই অস্থায়ী বাজার বসিয়ে চলছে বেচাকেনা।
গত মঙ্গলবার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চরকর্ণেশন কলাবাগানে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মাপাড়ের নারী-পুরুষ সবাই মিলে ইলিশ শিকারের জাল মেরামত করছেন। অপরদিকে শত শত জেলে নৌকা অপেক্ষায় আছে ইলিশ শিকারে নদীতে নামতে। কেউ আবার ইলিশ শিকার করে ফিরে আসছেন। নৌকা থেকে জাল নামিয়ে তাজা ইলিশ আলাদা করতে ব্যস্ত অনেকেই। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে মা ইলিশ বেচাকেনার জন্য ওই এলাকায় বসেছে অস্থায়ী বাজারও। ইলিশ কিনতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই অস্থায়ী বাজারে প্রচুর মানুষকে ভিড় করতে দেখা যায়।
মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরা নিয়ে জেলেরা দিচ্ছেন নানা যুক্তি। তারা বলছেন, পদ্মা নদীর এই এলাকায় সারাবছর খুবই কম ইলিশ ধরা পড়ে। শুধু এই নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়া যায়। এই ইলিশ যদি আমরা এখন নাও ধরি, তবুও তা পদ্মা নদীতে থাকবে না। এসব মাছ ভারতে চলে যাবে। তাই তারা অবৈধ জেনেও ডিমওয়ালা ইলিশ শিকার করছেন।
চরকর্ণেশন কলাবাগানের অস্থায়ী বাজারে ইলিশ কিনতে আসা কয়েকজন স্বীকারও করেন, এভাবে ডিমওয়ালা মাছ শিকার করলে একটা সময় নদীতে আর ইলিশের দেখা মিলবে না। তবে সারাবছর ইলিশের যে দাম, তাতে এই মাছ কিনে খাওয়া প্রায় অসম্ভব। সে জন্য অবৈধ জেনেও একটু কম দামে ইলিশ কিনতে এসেছেন তারা।
আলাপকালে অসংখ্য জেলে অভিযোগ করে বলেন, পদ্মা নদীতে হাজার হাজার জেলে মাছ শিকার করলেও তাদের বেশির ভাগ নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারি অনুদান পান না। যারা জেলে নয়, অন্য পেশায় আছেন, তারাই বিভিন্ন উপায়ে জেলে তালিকায় নাম দিয়ে অনুদান পেয়ে যান।
এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এ বছর মা ইলিশ ধরা রুখতে নিষেধাজ্ঞাকালীন প্রশাসনের তৎপরতা এতটা ঢিলেঢালা, যা নজিরবিহীন। বিগত বছরগুলোতে প্রশাসনের কড়া নজরদারি, অভিযান, জরিমানা এড়িয়ে কিছু জেলে ঠিকই মাছ শিকার করেছেন, তবে তার সংখ্যা এ বছরের মতো এতটা বেশি নয়। দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমরান মাহমুদ তুহিন জানান, পদ্মা নদীর ৬৫ কিলোমিটারের বিশাল এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। প্রতিনিয়ত অভিযান চললেও তারা যে দিকে যান, অপরদিকে জেলেরা মা ইলিশ শিকার শুরু করে দেন। তাদের ব্যবহৃত স্পিডবোটটিও বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে অভিযান চালাতে হচ্ছে। এসব ট্রলারের গতি জেলেদের নৌকার চেয়ে কম। কারণ জেলেদের ছোট নৌকায় বড় ইঞ্জিন ব্যবহার করে। অপরদিকে বর্তমানে জেলেরাও মারমুখী। অনেক কিছু বিবেচনা করে তাদের অভিযানে যেতে হয়। তার পরও নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে নৌ-পুলিশ মা ইলিশ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা আল রাজীব জানান, সার্বক্ষণিক মা ইলিশ রক্ষার জন্য অভিযান পরিচালনা করতে যে পরিমাণ লোকবল ও নৌযান প্রয়োজন, সেগুলো মৎস্য বিভাগের নেই। এই সুযোগে জেলেরা বেপরোয়া হয়ে মা ইলিশ শিকার করছেন। মা ইলিশ রক্ষায় প্রণোদনা বাবদ ৪ হাজার ৬৯০ জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এ ছাড়া মা ইলিশ ধরার অপরাধে ১৩ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৮ জেলেকে কারাদণ্ড ও ৩ লাখ ২০ মিটার জাল ধ্বংস করা হয়েছে।