নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ও কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোকাররম সরদার মোকাকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।
রোববার (২৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত আড়াইটায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আলীগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গভীর রাতে মোকাররমকে সেনাবাহিনী আটক করে ফতুল্লা থানায় সোপর্দ করেছে। তাকে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
এর আগে ২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় চাঁদা দাবি ও মারধরের ঘটনায় সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ ও মোকাররমসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়। এ মামলায় আরও পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে শাহ আলম নামের এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে মামলার আবেদন করলে আদালতের নির্দেশে ফতুল্লা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়িক কাজে যাওয়ার সময় পিস্তল ঠেকিয়ে বাদীর সঙ্গে থাকা নগদ ২০ লাখ টাকাসহ জরুরি কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন অভিযুক্তরা। এ সময় তারা তাকে অপহরণ করে আলীগঞ্জে মোকাররমের অফিসে নিয়ে যান। এ সময় তাকে মারধর করে ১০টি অলিখিত চেকের পাতা ও স্ট্যাম্পে সই নিয়ে নেওয়া হয়।
জানা যায়, মোকাররম সরদার একসময় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মাত্র ৮০ টাকা রোজে লোড-আনলোডের কাজ করতেন। বুড়িগঙ্গায় জাহাজ থেকে লোড-আনলোডের সময় চুরি করে রাখা চাল, ডাল, গম, পাথর, কয়লা, সার বিক্রি করতেন মোকারম সরদার। তার রয়েছে জাহাজের পণ্য চোরাইয়ের সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেট থেকে মোকারম সরদার যে পরিমাণ টাকা আয় করতেন তার অর্ধেক স্থানীয় নেতাদের ভাগ দিতেন।
পরবর্তীতে শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে নেতা বনে যান মোকাররম। রাজনীতি করেই এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক তিনি। সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের ছত্রছায়ায় নানা অপকর্ম করতেন তিনি।
মূলত হারুনের অবৈধ সম্পদের কেয়ারটেকার ছিলেন মোকাররম। কেয়ারটেকার মোকাররম সরদারকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে বিপুল পরিমাণ টাকা ছিটিয়ে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত করান হারুন। ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকার পরও মোকাররমকে চেয়ারম্যান বানানো হয় শুধু হারুনের অবৈধ সম্পদ পাহারা দেওয়ার জন্য।
আলীগঞ্জের স্থানীয়রা জানান, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপার থাকাকালে আলীগঞ্জ এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মোকাররম সরদারের লেবার অফিসে হারুন অর রশিদের আনাগোনা ছিল প্রতিনিয়ত। ব্যবসায়িক নানা হিসাবের পাশাপাশি এই অফিসটি টর্চার সেল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে সেসময়।