হিমালয় চূড়ায় আরেকবার…

প্রকাশিত: ১২:২২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৪

ক্রীড়া ডেস্ক:

দুই বছর আগে রূপকথার গল্প যেখানে লিখেছিলেন, কাঠমান্ডুর সেই রঙ্গশালায় মঙ্গলবার ট্রফি হাতে সাবিনা খাতুন। যে আঙ্গিনায় ফুটবলের সাফল্যের গল্প লিখে ‘ছাদখোলা” বাসে চড়ে প্রদক্ষিণ করেছিলেন রাজধানী ঢাকা, সেই মঞ্চে আরেকবার ইতিহাসের হাতছানি বাংলাদেশের মেয়েদের। টানা দ্বিতীয়বারের মতো হিমাদ্রির শিখরে ওঠার স্বপ্ন দেখা লাল-সবুজের মেয়েদের বাধা নেপাল। নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় শিরোপা থেকে এক ধাপ দূরত্বে পিটার বাটলারের দল। সেই দূরত্বে পৌঁছানোর লড়াইয়ে আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা পৌনে ৭টায়। নারী সাফের সর্বশেষ আসরের মতো একই ছন্দে, একই গতিতে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ।

পরিবর্তনটা হয়েছে শুধু ডাগআউটে। গোলাম রব্বানী ছোটনের জায়গায় ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার। তবে গত আসরে শিরোপা জয়ের পথে কোনো বিতর্কে আঁচ লাগেনি। এবার পাকিস্তানের কাছে গ্রুপ পর্বে ড্রয়ের পরই বাংলাদেশ শিবিরে অন্তঃকলহের আগুন ছড়িয়ে যায় মনিকা চাকমার এই মন্তব্যে, ‘কোচ সিনিয়রদের পছন্দ করেন না।’ সিনিয়র- জুনিয়র সিন্ডিকেট বিতর্কের সঙ্গে কোচ পিটার বাটলার মেয়েদের সাবেক গুরু গোলাম রব্বানী ছোটনকে টেনে এনেছেন। তবে মাঠের বাইরের নেতিবাচক উত্তাপটা গায়ে না মেখে সবুজ গালিচায় মেয়েরা হয়ে উঠেছেন একতাবদ্ধ। দেশকে আরেকটি ট্রফি এনে দেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাই যেন পুরো দলকে একীভূত করেছে।
গতকাল ফাইনাল পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের কথাতেও ফুটে উঠেছে ট্রফি জেতার জন্য কতটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা, ‘যেসবের ভেতর দিয়ে মেয়েরা গিয়েছে, সেসব বিষয় অতিক্রম করে যে ধরনের ফুটবল খেলেছে, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। আমি বিশ্বাস করি, এবারও শিরোপা জিততে পারব।”

মাঠের ১১ ফুটবলারের সঙ্গে নেপালের দর্শকরাও বাংলাদেশের বড় প্রতিপক্ষ। ১৬ হাজার ধারণক্ষমতার গ্যালারির স্লোগান যে ‘নেপালের’ নাম ধরে উঠবে, তা অনুমেয়। দর্শকের চাপ সামলে কীভাবে সেরাটা মেলে ধরতে হয়, ২৫ মাস আগেই তা দেখিয়েছিলেন কৃষ্ণা রানী সরকার- শামসুন্নাহাররা। বরং এই ভরা গ্যালারিকে নিজেদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন সাবিনা। ‘আমাদের এই মাঠে এই দর্শকের সামনে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। আমার মনে হয়, যারা স্বাগতিক, তাদের জন্য ফাইনালটা চ্যালেঞ্জিং।’
মধ্যমাঠে বাংলাদেশের নিউক্লিয়াস মারিয়া মান্ডা- মনিকা চামকা। তাদের পরিকল্পনার আক্রমণের সুরে ফিনিশিং লাইনে দুর্দান্ত অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও তহুরা খাতুন। এই চারজনের রসায়নে মিডফিল্ড ও অ্যাটাকিং লাইনে প্রতিপক্ষের জন্য বিপজ্জনক লাল- সবুজের দলটি। ভারত ও ভুটানকে বিধ্বস্ত করা ম্যাচে নিজেদের ফুটবলশৈলী দেখিয়েছেন তারা। তবে আজ বাংলাদেশের জন্য ভয়ের কারণ নেপালের সাবিত্রা ভান্ডারি। সেমিফাইনালে তাঁর গোলেই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ফিরে নেপাল এবং টাইব্রেকারে জিতেছিল স্বাগতিকরা।

গত আসরে জ্বরের কারণে শিরোপা মঞ্চে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। এবার সাবিত্রার সঙ্গে রেখা পাডোলের জুটিটা প্রতিপক্ষকে বেকায়দায় ফেলেছিল। টুর্নামেন্টে সাত গোল করা রেখা শেষ চারে লাল কার্ড দেখায় ফাইনালে নেই। এটা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি হলেও নেপালের আছেন প্রীতি রায়ের মতো বিপজ্জনক ফুটবলার। তাই আগের ম্যাচের চেয়ে আজ বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে পড়তে হবে কঠিন চ্যালেঞ্জে।