বীরবিক্রম নাজমুল হুদা হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ২০ জুলাই

প্রকাশিত: ১০:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০২৩

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রমকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আগামী ২০ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আজ সোমবার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দেননি। এজন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দার প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

এর আগে ১০ মে রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা করেন নিহতের মেয়ে ও সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খান। মামলায় ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর (অব.) আব্দুল জলিলকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী নাহিদ ইজহার খান উল্লেখ করেছেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তার বয়স যখন ৫ বছর ও তার বড় ভাইয়ের বয়স ৮ বছর, তখন তার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭২ বিশেষ ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে রংপুরে কর্মরত ছিলেন। ওই অবস্থায় ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনীর বিপথগামী, বিশৃঙ্খল সদস্যদের হাতে তার বাবা নিহত (শহিদ) হন। তার সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ বীরউত্তম এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এটিএম হায়দার বীরউত্তম নিহত (শহিদ) হন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরে তারা বড় হয়ে বাবার কোর্সমেট, কলিগ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে নিজেদের অনুসন্ধানে জানতে পারেন- ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, সকালে তার বাবাসহ অন্য দুই সামরিক কর্মকর্তা ১০ ইস্ট বেঙ্গলের অফিসে উপস্থিত ছিলেন। যেটি তখন জাতীয় সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেলে ছিল। সকালে তারা বাবা যখন নাস্তা করছিলেন, তখন দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি থেকে দশম ইস্ট বেঙ্গলের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নওয়াজেশের কাছে টেলিফোন আসে।

‘এরপর তারা বাবাসহ অন্য দুই সামরিক কর্মকর্তাকে বাইরে নিয়ে আসে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তারা। আমাদের অনুসন্ধানে আরও জানতে পারি- তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জাসদ নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের (অব.) নির্দেশে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও এবং সৈনিকরা সংঘবদ্ধভাবে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।’

এজাহারে আরও বলা হয়, তৎকালীন ক্যাপ্টেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজ ও মেজর মুকতাদির, তৎকালীন ক্যাপ্টেন সাবেক পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তারা আরও জানতে পেরেছেন- দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা জেসিও ও সৈনিকদের সঙ্গে মেজর মো. আসাদউজ্জামান (অব.)- এই তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করার পর বেয়োনেট চার্জ করে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধে তার বাবা যোগ দেন এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ছিলেন যশোর ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টর কমান্ডার। তার সরাসরি নেতৃত্বে পরিচালিত বিখ্যাত গরিবপুরের ট্যাংক যুদ্ধ, চৌগাছা যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজিত হয়েছিল এবং ৬ ডিসেম্বর তার বাবার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসেবে যশোর হানাদার বাহিনীমুক্ত হয়।

‘আমাদের জন্য সময়টা এতটাই প্রতিকূল ছিল যে একবার ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কাছে আমার ভাই গিয়েছিল বাবার নামে রাস্তার নামকরণের জন্য। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছিল। তিনি ভাইয়ের আবেদনপত্র হাতে নিয়ে আমার বাবার নাম দেখে ভাইকে তার অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন।

মামলার বাদী আরও বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায় আছে। দেশবাসী ন্যায়বিচার পাচ্ছে। তাই আমি আমার বাবাসহ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক কর্মকর্তার হত্যার বিচার দাবি করছি

আসামিদের মধ্যে কেবল মেজর (অব.) আব্দুল জলিল বেঁচে আছেন। আর যাদের নামোল্লেখ করা হয়েছে তারা কেউ বেঁচে নেই।