দলীয় পদ পুঁজি করে বাণিজ্যে মাতেন বাবুল রানা

প্রকাশিত: ৩:০৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৪

খুলনা প্রতিনিধি:

ত্যাগী নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগে সুনাম ছিল এম ডি এ বাবুল রানার। দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও বাবুল কিছুই করতে পারেননি– ২০১৯ সালের আগে তাঁকে নিয়ে এমন মন্তব্য করতেন কর্মীরা। ওই বছরের ১০ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন বদলে দেয় তাঁর ভাগ্য। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর পাল্টে যান তিনি। টেন্ডার ছাড়াই খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ময়ূরী আবাসিকে কোটি টাকার প্লটপ্রাপ্তি, বেনামে কেসিসির ঠিকাদারি কাজ পাওয়া, কলেজের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। শেষ দিকে এসে কর্মীদের মন্তব্য ছিল, ‘বাবুল রানার সততা ছিল সুযোগের অভাব।’

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশির দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে হাতেখড়ি বাবুল রানার। দীর্ঘদিন মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। পরে যুগ্ম সম্পাদক এবং ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক হন। তেমন আয়ের উৎস ছিল না তাঁর। অবশ্য গত কয়েক বছরে আগের খোলস বদলে ফেলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদে বাবুল রানাকে সবুরণনেছা মহিলা ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি, হাজী মালেক ইসলামিয়া কলেজের সভাপতি ও খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি করা হয়। খুলনা শিশু ফাউন্ডেশনের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর মধ্যে সবুরণনেছা কলেজে ২২ জন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে তাঁর হাত ধরে। এই নিয়োগে অধ্যক্ষসহ তিনি ব্যাপক লাভবান হন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কেডিএ থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৪ মে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কেডিএর ১৫টি প্লট বিভিন্নজনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই সময় তিন কাঠার প্লট বরাদ্দ পান বাবুল রানা। প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ওই প্লট তাঁকে দেওয়া হয় ৪৫ লাখ টাকায়। পরের বছরই দ্বিগুণ লাভে প্লট বিক্রি করে দেন তিনি।
অবশ্য কেডিএর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিরাজুল ইসলাম বলেন, নিয়ম মেনেই বাবুল প্লট পেয়েছেন।

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) থেকে জানা গেছে, কোনো ধরনের অংশগ্রহণ ছাড়াই আওয়ামী লীগ নেতাদের ঠিকাদারি কাজ দিতেন সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক। দেখা যেত, সাধারণ ঠিকাদাররা শিডিউল কিনে, জামানতের টাকা ব্যাংকে জমাসহ মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতেন। কিন্তু দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে যে ঠিকাদার কাজ পেতেন, তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হতো– কাজটি আওয়ামী লীগের ওই নেতা করবেন। পরে ঠিকাদাররা কমিশন দিয়ে কাজটি কিনে নিতেন।
২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর নগরীর পশ্চিম বানিয়াখামার ক্রস রোড বাইলেনসহ চারটি গলি উন্নয়নে ১ কোটি ৩৮ হাজার টাকার ঠিকাদারি কাজ পায় টুটুল অ্যান্ড কোং নামে প্রতিষ্ঠান। কাজটি বাবুল রানাকে দিতে বলেন তৎকালীন মেয়র। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোটা অঙ্কের কমিশন দিয়ে কাজটি বাবুলের কাছ থেকে কিনে নেয়। একইভাবে ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি টিবি ক্রস রোড মেরামতের ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার কাজ পায় মেসার্স তাজুল ইসলাম। এটিও বাবুলকে দিয়ে দেন মেয়র। এই কাজ থেকে তিনি কমিশন নিয়েছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাজুল ইসলামের মালিক যুবলীগ নেতা তাজুল ইসলাম জানান, ওই সময় মেয়র লাইসেন্স দিতে বলেছেন। কাজটি বাবুল রানা নিজেই করছেন। শুরুর দিতে আমি শ্রমিক ও মিস্ত্রি দিয়ে সহযোগিতা করেছি। পরেরটুকু জানি না।

কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, কাজ ফেলে রাখায় ঠিকাদারকে শোকজ করা হয়। সম্প্রতি তারা কার্পেটিংয়ের মালপত্র জমা দিয়েছে। বৃষ্টি শেষ হলেই কাজ শুরু হবে।
আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি গঠন করতেও বাবুল রানার বিরুদ্ধে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ ছিল। ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদ মহানগর সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক নির্ধারণ করে দিতেন। অবশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বাবুল করতেন। সেখানে অর্থের বিনিময়ে অনেককে কমিটিতে ঢোকানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। আত্মগোপনে থাকায় এ বিষয়ে বাবুল রানার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।