মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ ও চেয়ারম্যানের সনদপত্রসহ বিভিন্ন সেবা পেতে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার দিঘলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। একটি স্বাক্ষরের জন্য তাদের খরচ করতে হচ্ছে হাজারো টাকা।
নাগরিকদের সেবা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউপি সদস্যরাও। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসক এক দিনও ইউনিয়ন পরিষদে বসেননি বলে অভিযোগ করেছেন ইউপি সদস্যরা।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ফরমান আলী। তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্মনিবন্ধনের জন্য যান দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে। কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) উপজেলা পরিষদ অফিসে গিয়েছেন ১৫ দিন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদ। এতে ফরমান আলীর যাতায়াত খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
দিঘলিয়ার দেলুয়া গ্রামের মো. মুসা ইব্রাহিম তাঁর জন্মনিবন্ধনের জন্য তিন দিন ধরে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘুরছেন। মুসা বলেন, বেলা ২টার পর স্বাক্ষর করেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন, দিঘলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ জনপ্রতিনিধিদের সনদ পেতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
গত রোববার দিঘলিয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের সনদ পেতে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জটলা করছিলেন কয়েকজন বেকার যুবক। তারা জানান, আগামী ১০ নভেম্বর মানিকগঞ্জে পুলিশ লাইনে লোক নেবে। পরিষদের বারান্দায় একটি সনদপত্রের বই রাখা আছে। স্থানীয় বেকার যুবক আকাশ হোসেন, জাকির হোসেন ও আলামিন নিজেরাই লিখে নিচ্ছেন সনদ। ওই সনদে ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর নিয়ে প্রশাসকের কাছে আসেন। কিন্তু বেলা ২টার পর প্রশাসকের কার্যালয়ে এলে সনদে স্বাক্ষর করেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদ।
যুবকরা অভিযোগ করে বলেন, দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাটুরিয়া উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের কার্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। প্রতিদিন আসা-যাওয়া করতে খরচ হচ্ছে দুই থেকে তিনশ টাকা। একটি স্বাক্ষরের জন্য ঘুরতে হচ্ছে কয়েক দিন। বেলা ১১টার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক অফিসে বসেন। বসেই অফিসিয়াল নথিপত্রের কাজ করেন। সেবাগ্রহীতাদের ভূমি অফিসে গোল ঘরে বসিয়ে রাখেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বেলা ২টা বাজলেই তিনি আর স্বাক্ষর করবেন না বলে অফিস সহকারী জানিয়ে দেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকার পর সেবাগ্রহীতাদের চলে যেতে হয়। এভাবে এলাকার সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকেই দিঘলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিউল আলম জুয়েল পলাতক। তিনি কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ায় ইউপি সদস্যরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অনাস্থা আনেন। এর পর সাবেক জেলা প্রশাসক রেহানা আক্তার গত ২৯ আগস্ট সাটুরিয়া সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেন।
দিঘলিয়া ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসক এক দিনের জন্য দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে বসেননি। ফলে ইউনিয়নের নাগরিকদের জন্মনিবন্ধন, চেয়ারম্যানের সনদ, নাগরিক সনদপত্র, বিভিন্ন ভাতার কার্ড ও কৃষকদের কৃষিকার্ড পেতে স্বাক্ষর করতে নাগরিকদের যেতে হচ্ছে প্রশাসকের কার্যালয়ে। ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, বেলা ২টার পর স্বাক্ষর না করায় নাগরিকরা সেবা পেতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন।
দিঘলিয়া ইউনিয়ন তথ্যসেবার উদ্যোক্তা সামিউল ইসলাম বলেন, আগে দু-এক দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া যেত। এখন একটি জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। তিনি বলেন, ইউপি সদস্যরা থাকলে প্রশাসক থাকেন না। প্রশাসক থাকলে ইউপি সদস্যদের পাওয়া যায় না। চেয়ারম্যান না থাকায় এ ইউনিয়নের মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিসদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রাশেদ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মামুন হোসেন বলেন, তারা সব ইউপি সদস্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসককে সপ্তাহে এক দিন পরিষদে বসতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি না বসে উপজেলায় তাঁর কার্যালয়ে যেতে বলেছেন। এতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ নাগরিক সেবা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ইউপি সদস্যরা আরও বলেন, অনুমতি ছাড়া তাঁর কক্ষে ঢোকা যায় না। আবার অনুমতি মিললেও প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক তানভীর আহমদের কাছে নাগরিক হয়রানির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো নাগরিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন না। ইউনিয়ন পরিষদে বসেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে নাগরিকের প্রয়োজন, তাকে এসে স্বাক্ষর করে নিতে হবে।
ইউএনও শান্তা রহমান ছুটিতে থাকায় এবং মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।