ক্রীড়া ডেস্ক:
স্টেডিয়ামে গ্যালারির এক পাশে সকাল থেকে ছিলেন হাতেগোনা কিছু দর্শক। তাইজুল ইসলাম-নাহিদ রানাদের বোলিংয়ের সময় রোদ থেকে বাঁচতে জায়ান্ট স্ক্রিনের নিচে পড়া ছায়া খুঁজতে ব্যস্ত ছিলেন তারা। বোলিংয়ে তখন আর কিছু পাওয়ার আশা নেই।
বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ওয়ান মুল্ডার সেঞ্চুরি করতেই ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ততক্ষণে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪৪.২ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে রেকর্ড ৫৭৫ রান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। রোদ কমায় মাঠে আসা দর্শকরাও বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখতে একটু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসেন। কিন্তু চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গে পড়ন্ত বেলায় সেই চিরচেনা ব্যাটিং অসুখে ভুগেছেন সাদমান ইসলাম, জাকির হাসানরা।
দ্বিতীয় দিন মাত্র ৯ ওভার ব্যাটিং করে স্কোরবোর্ডে ৩৪ রান যোগ করতেই ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস থেকে ৫৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শুরু করবেন চারে নামা মুমিনুল হক (৬*) ও ছয়ে নামা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (৪*)। বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় দিন শেষে তাই ব্যাটিং ব্যর্থতাও সঙ্গী বাংলাদেশ দলের।
ফিল্ডিংয়ের দীর্ঘ ক্লান্তির পর ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওপেনার সাদমান উইকেটের পেছনে শূন্য রানে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। আম্পায়ার অবশ্য আউট দেননি। তবে উইকেটরক্ষক কাইল ভেরেইনার আত্মবিশ্বাস ও বোলার কাগিসু রাবাদার চাওয়ায় রিভিউ নিয়ে সফল হয় প্রোটিয়ারা। পঞ্চম ওভারে ২ রান করে আউট হন অফ ফর্মে থাকা জাকির হাসান। বল পরিষ্কার তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে গেলেও রিভিউ নিয়ে নষ্ট করেন তিনি। এর পর স্লিপে ক্যাচ দেন ১০ রান করা ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। নাইট ওয়াচম্যান হাসান মাহমুদও আলো স্বল্পতায় বাকি থাকা দিনের এক-দুটা ওভার পার করার দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। ফিরে যান ৩ রান করে। টেস্টের বোলিং র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ফেরা রাবাদা নিয়েছেন বাংলাদেশের ২ উইকেট।
এর আগে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান তুলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। নির্ভার থেকে দ্বিতীয় দিন শুরু থেকেই ব্যাট তুলে খেলতে থাকে। কিন্তু লাঞ্চের আগে নিজের টানা তিন ওভারে তিন ব্রেক থ্রু দেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। প্রোটিয়াদের প্রথম ৫ উইকেটই নেন তিনি। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে উইকেট নেন গতিময় পেসার নাহিদ রানাও। তবে পরের সময়টা ব্যাট হাতে কর্তৃত্ব করেছেন সফরকারী প্রোটিয়ারা। ওপেনার টনি ডি জর্জি ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির ইনিংসটা ১২ চার ও চার ছক্কায় ১৭৭ রানে থামিয়েছেন। প্রথম দিন ১০৬ করে ফেরেন স্টাবস। পেস অলরাউন্ডার মুল্ডার খেলেন ১০৫ রানের হার না মানা ইনিংস। সেনুরান মুত্তুসামির ব্যাট থেকে প্রোটিয়ারা ৭৫ বলে ৬৮ রান পায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার ওই তিন ব্যাটাররা টেস্টে তাদের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ফিরিয়েছেন ৭৫ বছর আগে ভারতের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন ব্যাটারের এক ইনিংসে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়ার স্মৃতি। এশিয়ার মাটিতে প্রথমবার এক ইনিংসে প্রোটিয়াদের তিন ব্যাটার সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছে তারা। এর আগে ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে ৭ উইকেটে ৫৮৩ রান করে ইনিংস ছেড়েছিল প্রোটিয়ারা। ২০১৭ সালে ঘরের মাঠে ৪ উইকেটে করেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৭৩ রান। কঠিন ও হতাশার দুই দিনে বাংলাদেশ দল বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ব্যর্থতার পর ব্যাটিংয়ে হয়েছে চূড়ান্ত ব্যর্থ। বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি বলতে তাইজুল ইনিংসে ১৪ বার ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন।