বাসায় চুলা জ্বলে মিটিমিটি, গ্যাসস্টেশনেও ভোগান্তি

প্রকাশিত: ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখা যায় চুলা জ্বলে মিটিমিটি। ভাজি, ডাল ও ভাত করতেই আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লাগে।’ গ্যাস নিয়ে নিত্যদিনের ভোগান্তির কথা এভাবেই জানালেন রাজধানীর দক্ষিণ মুগদার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী জেসমিন আক্তার।

তিনি বলেন, গ্যাসের এই ভোগান্তি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সকালে গ্যাস চলে যায় আর আসে বিকেলে। কিন্তু চাপ কম থাকায় চুলা ঠিকমতো জ্বলে না। তাই দিনভর অফিস করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রান্নার কাজ করতে হয়।
মধুবাগ এলাকার বাসিন্দা মাসুদা হক জানান, পাইপের গ্যাস ঠিকমতো পাওয়া যায় না দেখে গত এক বছর ধরে সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করছেন। গ্যাস নিয়ে এমন ভোগান্তি অধিকাংশ আবাসিক গ্রাহকের। মিরপুরের বাসিন্দা মুরসালিন জুনায়েদ জানান, সারাদিনই তো গ্যাস থাকে না, ভাত রান্না করি রাইস কুকারে। অন্য রান্না চলে ইলেকট্রিক চুলায়। কিন্তু মাস শেষে ঠিকই গ্যাস বিল দিতে হয়।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলায় গ্যাসের সংকট বেশি। এসব এলাকার আবাসিক গ্রাহকদের বাসায় দিনের অধিকাংশ সময়ই গ্যাস থাকে না। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাসের সংকট চলছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম সমকালকে বলেন, গত সরকারের গ্যাস উত্তোলনে জোর না দিয়ে এলএনজি আমদানি করে কমিশন নেওয়ার দিকেই নজর ছিল বেশি। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের। বাসাবাড়িতে দিনের পর দিন গ্যাস থাকে না। কিন্তু মাস শেষে তাদের বিল দিতে হচ্ছে ঠিকই। আবার বিকল্প উপায়ে রান্না করতে গিয়ে মাসের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, এলএনজি ব্যয়বহুল হওয়ায় এ খাতে সরকারের ভর্তুকি বেড়েছে। সেই লোকসান কমাতে বারবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। বেশি দাম দিয়েও গ্রাহক ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছেন না। আবাসিক গ্রাহকদের ঠিকমতো গ্যাস দিতে না পারলে পুরো বিল নেওয়া যাবে না। যে গ্রাহক যতটুকু গ্যাস ব্যবহার করবেন তিনি যেন ততটুকুর বিল দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না গ্যাস

গ্যাসের ঘাটতির প্রভাব পড়ছে সিএনজি স্টেশনগুলোতেও। স্বল্প চাপের কারণে গাড়িতে গ্যাস নিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। সরবরাহ কমায় ঢাকাসহ সারাদেশের ফিলিং স্টেশনগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরেও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না।

হাসান নামের এক প্রাইভেটকারচালক জানান, গতকাল বুধবার সকাল ৭টা থেকে তিনি গ্যাসের জন্য লাইনে দাঁড়ান। দুই ঘণ্টা পর যখন স্টেশনে পৌঁছেন, তখন গ্যাস পাননি। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোকেয়া সরণি, খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি সিএনজি স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘ লাইন।

মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার একটি পাম্পে অপেক্ষায় থাকা অটোরিকশাচালক সোহাগ জানান, যখন সংকট কম ছিল তখন ২৩০-২৫০ টাকার গ্যাস নেওয়া যেত। সময় লাগত দুই-তিন মিনিট। ২৫০ টাকার গ্যাস নিলে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা আয় হতো। এখন গ্যাসের চাপ এত কম, ১০০ টাকার বেশি নেওয়া যাচ্ছে না। দিনে একাধিকবার গ্যাসের জন্য লাইন দিতে হচ্ছে। একবার লাইন ধরে গ্যাস নিতে লাগছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা।

সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, স্টেশন থেকে গাড়িতে গ্যাস দিতে হলে লাইনে গ্যাসের চাপ থাকতে হয় ১৫ পিএসআই। তবে তা পাওয়া যায় না। সাধারণত ৬-৭ পিএসআইয়ে গ্যাস দেওয়া হয়। এখন তা আরও কমে গেছে। ফলে সংকট বেড়েছে।