ডেস্ক রিপোর্ট:
কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বন্যার কবলে পড়েছে স্পেন। বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১১ জনে দাঁড়িয়েছে। এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ। দেশটিতে ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলে বন্যার ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। সেখানে দুর্গতদের দেখতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতার কাছ থেকে দুয়োধ্বনি শুনেছেন রাজা ফিলিপে ও রানি লেতিসিয়া। দুর্যোগ মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ উদাসীন ছিল এমন অভিযোগ তুলে তাদের লক্ষ্য করে কাদা ছুড়ে মারে লোকজন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও ভ্যালেন্সিয়া আঞ্চলিক সরকারের প্রধান কার্লোস মাথোন এই সফরে রাজা-রানির সঙ্গেই ছিলেন। সেখানে ভিড় বাড়লে দ্রুত তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে রাজা ফেলিপে সেখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যেও রাজা ফেলিপে ও রানি লেতিসিয়া বন্যাদুর্গতদের কথা শোনেন এবং তাদের সান্ত্বনা দেন।
ভ্যালেন্সিয়া শহরের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত পাইপোর্তা এলাকা রোববার পরিদর্শনে যান রাজা ফিলিপে। সঙ্গে ছিলেন পেদ্রো সানচেজ ও আঞ্চলিক গভর্নর কার্লোস মাথোন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা এ সময় তাদের লক্ষ্য করে ‘খুনি’ ‘খুনি’ স্লোগান দিতে থাকে। লোকজন তাদের উদ্দেশে অপমানসূচক মন্তব্য করেন এবং কাদা ছোড়েন। নিরাপত্তা বাহিনী ছুড়ে মারা কাদা থেকে তাদের রক্ষায় ছাতা খুলে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। এ সময় রানিকে মাথায় হাত দিয়ে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
যদিও স্পেনের রাজা তুলনামূলকভাবে জনপ্রিয়। বাবার সিংহাসন ত্যাগের পর তিনি সিংহাসনে বসেন। তবে এই সফরে জনগণের ক্ষোভের কারণ হলো আঞ্চলিক গভর্নর কার্লোস মাথোন ও প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। ভ্যালেন্সিয়ায় আকস্মিক বন্যার এই সংকট মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ ছিল ধীরগতিতে। এছাড়া সমন্বয়হীনতার অভিযোগও আছে। জনগণের ক্ষোভ- আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বন্যার সতর্কতা দেওয়ার পরও এ বার্তা জানাতে কয়েক ঘণ্টা দেরি করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সমন্নয়হীনতার যে অভিযোগ রয়েছে তার পেছনের কারণ হলো রাজনৈতিক। মাথোন ও সানচেজ দুজন দুই রাজনৈতিক দলের নেতা। স্পেনের ফেডারেল সরকার আঞ্চলিক সরকারের অনুমোদন ছাড়া জরুরি তহবিল ছাড় দিতে পারে না। বন্যা শুরু হওয়ার চার দিন পর শনিবার সেই অনুমতি আসে। এই সমন্বয়হীনতা ও ধীরগতি- জনগণের ক্ষোভকে উসকে দিয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, মঙ্গলবার ভ্যালেন্সিয়ার কিছু অংশে আট ঘণ্টায় এক বছরের সমপরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বুধবার বলেছে, পূর্বাঞ্চলের ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশে প্রবল বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ভবন ও সেতু ভেসে গেছে। ভারী বর্ষণে এখনও দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চল বিপর্যস্ত। উদ্ধারকারীরা জীবিতদের খুঁজে বের করতে কাজ করছেন। বৃহস্পতিবার এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি উদ্ধারকর্মী ড্রোনের সাহায্যে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিলেও বৃষ্টির কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যতটা সম্ভব জীবন বাঁচানো।
ভ্যালেন্সিয়ার পাইপোর্টা শহরের একটি নদীর তীর ধসে অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্প্যানিশ আবহাওয়া সংস্থা এইমেটের তথ্যমতে ভ্যালেন্সিয়ার নিকটবর্তী চিভা শহরে মাত্র আট ঘণ্টায় এক বছরের সমান বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশের দক্ষিণ এবং পূর্বাঞ্চলের জন্য আরও বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়।
বন্যাকবলিত এলাকায়, শত শত লোক অস্থায়ী বাসস্থানে আশ্রয় নেন। পাশাপাশি রাস্তা পরিষ্কার এবং বাড়িঘর ও ব্যবসা পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করেন। ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে স্পেনের বাকি অংশের সংযোগকারী অনেক রাস্তা এবং রেল নেটওয়ার্ক এখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বন্যায় হতাহতদের জন্য স্পেনে বৃহস্পতিবার সরকারি ভবনে পতাকা অর্ধনমিত রেখে এবং মিনিট নীরবতার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তিন দিনের জাতীয় শোক পালন করা হয়।
জলোচ্ছ্বাসে এলাকাজুড়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, গাড়িগুলো পরস্পরের ওপর ভেঙে পড়েছে, গাছপালা উপড়ে গেছে, বিদ্যুতের লাইন ভেঙে গেছে এবং মাটিতে আটকে পড়েছে ঘরের বিভিন্ন সামগ্রী। বন্যায় স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলের কিছু এলাকা এবং কাতালোনিয়ার ত্যারাগোনা অঞ্চলে লাল সতর্কতা জারি করেছে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কাদিজের জন্য কমলা সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।