নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) আইনি কাঠামোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়।
অন্যদিকে ইইউতে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বৈধ কাজের সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নেওয়ারও অনুরোধ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে– এ রকম ১০টি খাতের কথা উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী। ইইউর পক্ষে নেতৃত্ব দেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি।
বৈঠকে মানবাধিকার, সুশাসন এবং অন্তর্র্বতী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইইউ। বর্তমানে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে, তাতে মানবাধিকার ও সুশাসন উন্নত করার এ বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক, বহুত্ববাদী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের দিকে সংস্কারের অগ্রগতি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্র্বতী সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে বৈঠকে স্বাগত জানিয়েছে ইইউ।
গুম হয়ে যাওয়াদের নিয়ে তদন্তে সরকার যে কমিশন করেছে তা আন্তর্জাতিক সনদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অল পারসন ফ্রম এনফোর্স ডিসাপিয়ারেন্সেস (আইসিপিপিইডি) এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলেও বৈঠকে অভিমত দিয়েছে সংস্থাটি। সেই সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো কিছু আইন যা বিরোধী মত দমন এবং মৌলিক স্বাধীনতাকে খর্ব করতো সেগুলোকে সংস্কারের উদ্যোগ এ প্রতিশ্রুতির আভাস দেয়।
বৈঠকে জুলাই–আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংস দমন– পীড়নের শিকার ও বেঁচে যাওয়াদের প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি আগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিয়ে আলোচনা করেছে ঢাকা ও ব্রাসেলস। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনার জরুরী বলে বৈঠকে দুই পক্ষই একমত হয়েছে। এ সময়ে সকল পর্যায়ে যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে ইইউ। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) আইনি কাঠামোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এ আইনটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
বৈঠকে বিচার খাত, লোক প্রশাসন, নিরাপত্তা খাত এবং আইন ও সংসদে সক্ষমতা তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়। নারী, শিশু এবং সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ইইউ। এ বিষয়টি নজরে আনা প্রয়োজন বলেও বৈঠকে একমত হয়েছে ঢাকা ও ব্রাসেলস। বৈঠকে ইইউ জানিয়েছে, কেউ যাতে সহিংসতা, হয়রানি বা বৈষম্যের শিকারের ভয়ে বসবাস না করে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
সভা সূত্রে জানা গেছে, ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বৈধ পথে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে সরকার। দু’পক্ষের সম্মতিতে রোডম্যাপটি প্রকাশ করা হবে। এতে ১০টি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির সুযোগের কথা বলা হয়।
খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে– তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), কেয়ারগিভিং, নির্মাণ শিল্প, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি, কৃষি ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত, জাহাজ নির্মাণ ও তৈরি পোশাক শিল্প।
সভা সূত্র জানায়, দু’পক্ষের বৈঠকে অন্যান্য প্রসঙ্গের মধ্যে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ‘জিএসপি প্লাস’ নিয়েও আলোচনা হয়। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ এলডিসির কাতার থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর অতিরিক্ত তিন বছর বর্তমান স্কিম জিএসপি সুবিধা পাওয়া যাবে। ২০২৯ সাল থেকে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ হারে শুল্কারোপ হবে। তখন জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় প্রায় একই রকম সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ। তবে এ জন্য বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সংস্কার, সুশাসন, শ্রম অধিকার, পরিবেশসম্মত উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে শ্রম অধিকারের মানসম্পন্ন টেকসই সংস্কার এবং ত্রি-পক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশনগুলো মেনে চলত হবে। এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।