নিউজ পোস্ট বিডি: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভোটের দিন ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ওইদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে ভোটের দিন পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ নামে সংগঠনটি।
কিন্তু নির্বাচন কমিশন বলছে, ‘সরকারি হিসাবে সরস্বতী পূজার দিন ২৯ জানুয়ারি। এটি অপরিবর্তিত থাকলে হিন্দু পরিষদের দাবি আমলে নেয়ার সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের দাবি, ৩০ জানুয়ারি ভোট। একই দিন অনুষ্ঠিত হবে শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা। তাই ইসিকে চিঠি দিয়ে তারা ভোটের দিন পরিবর্তনের দাবি জানায়।
অবশ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরস্বতী পূজা ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
এমন পরিস্থিতিতে হিন্দু পরিষদ বলছে, ‘সরকারি হিসাবে নয়, পঞ্জিকা অনুযায়ী তারা সরস্বতী পূজা ৩০ জানুয়ারি উদযাপন করবেন।’
সরস্বতী পূজা কবে, তা নিয়ে তৈরি হওয়া সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাজন কুমার মিশ্র জাগো নিউজকে বলেন, ‘পঞ্জিকার হিসাবে সরস্বতী পূজা ৩০ জানুয়ারি। পঞ্জিকা দেখেই সাধারণত পূজা হয়ে থাকে। কেউ কেউ আগের দিন পূজা করবেন কি-না, সেটা আমি বলতে পারব না। তবে আমরা ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি হিসাবে যে ২৯ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা পড়েছে, সেটা আমি দেখিনি। তারা তিথি অনুযায়ী হয়তো বা ২৯ জানুয়ারি দিয়েছে। কারণ ২৯ জানুয়ারি পূজার ৯টা ১৪ মিনিট ২৬ সেকেন্ড পরে পঞ্চমী হবে। কিন্তু আমরা পঞ্জিকা অনুযায়ী সবসময় পূজা করি।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার অনুমোদিত সরস্বতী পূজা ২৯ জানুয়ারি। যদি মন্ত্রিসভা থেকে সরস্বতী পূজার দিন ২৯ থেকে পরিবর্তন করে ৩০ জানুয়ারি করা হয়, তখন আমরা কিছু করতে পারব। এটা ছাড়া কমিশন নির্বাচনের দিন পরিবর্তন করতে পারবে না।’
তবে সাজন কুমার মিশ্র বলছেন, ‘কী হবে না হবে, বলতে পারছি না। রংপুরে নির্বাচনের সময় দুর্গাপূজা হলো। তখন আমরা একটা আবেদন করেছিলাম, যাতে ওখানে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু পরিবর্তন করা হয়নি। আসলে এতে আমরা বিব্রত। আমি এটাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বলে মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় স্কুল-কলেজেই সরস্বতী পূজা হয়। আবার প্রায় স্কুল-কলেজেই ভোটকেন্দ্র করা হয়। একই জায়গায় পূজা ও ভোটকেন্দ্র হলে, ভোটের আগে নির্বাচনী সরঞ্জাম আর নিরাপত্তার একটা বিষয় থাকে। তাহলে যেসব স্কুল-কলেজে কেন্দ্রগুলো পড়বে, সেখানে কিন্তু আর পূজা হচ্ছে না। তাহলে পরিস্থিতিটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দিকে যাচ্ছে না?’
এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বলেও জানান হিন্দু পরিষদের এ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘কবে ভোট হতে পারে সেই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নেবে। তবে আমাদের দাবি হলো, পূজার দুদিন আগে ভোট হলে এবং ৩০ জানুয়ারির পরে হলে ভালো হয়।’
ঢাকা দুই সিটির ভোট পরিবর্তনের চিঠি শুধু নির্বাচন কমিশনকে নয়, আরও তিন রাজনৈতিক সংগঠনকে দেয়া হয়েছে বলেও জানান সাজন কুমার মিশ্র। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছি। তারপর বৃহত্তর তিনটি রাজনৈতিক দলকে – আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে (জাপা) স্মারকলিপি দিয়েছি।’
বিএনপি ও জাপার পক্ষ থেকে নির্বাচনের দিন পরিবর্তনের জন্য ইসিকে চিঠির আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। আওয়ামী লীগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দফতরে চিঠি দেয়ার সময় সাধারণ সম্পাদককে পাইনি।’
গত ২৪ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয় হিন্দু পরিষদ। এতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ আগামী ৩০ জানুয়ারি ২০২০ নির্ধারণ করেছেন। আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ওইদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেকের নিজ নিজ বাড়িতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাড়া-মহল্লা, বিভিন্ন ক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে এ পূজা উদযাপন করে। অতএব ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ করলে দেশের বৃহৎ একটি অংশ ভোটগ্রহণে কিংবা পূজা উৎসব পালনে বিঘ্ন ঘটবে। তাই ওই দুই সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন পরিবর্তন করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
ঢাকার দুই সিটির তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর, বাছাই ২ জানুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি, ভোট গ্রহণের দিন ৩০ জানুয়ারি।