ডেস্ক রিপোর্ট:
সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদ নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থিদের উত্থান ঘটেছে। অনেক রাজনৈতিক পণ্ডিতের আশঙ্কা ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রেও ডানপন্থার বাড়বাড়ন্ত দেখা যাবে। শেষ পর্যন্ত সে আশঙ্কাই সত্য হলো।
মঙ্গলবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থিরা তাদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে। বহু যুগ ধরে মুক্তবিশ্বের নেতৃত্বের দাবিদার দেশটি এখন ডানপন্থিদের উর্বর ক্ষেত্র। অভিবাসন ও মুসলিমবিরোধী সুর চড়িয়ে ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসের অধিপতি হতে যাচ্ছেন।
ট্রাম্প যে এত বড় বিজয় পাবেন– কেউ কল্পনাও করেননি। কয়েক সপ্তাহ ধরে আমেরিকানদের বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প সমানে সমান। ফলে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করতে কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে। কিন্তু গণনা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেখা গেল, ট্রাম্প আবার বড় ব্যবধানে বিজয়ী হতে চলেছেন।
মাত্র চার বছর আগে জো বাইডেনের কাছে পুনর্র্নিবাচনের দৌড়ে হেরেছিলেন ট্রাম্প। এর পর রিপাবলিকান পার্টি বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে মনোনয়ন দেয়। গতকালের ফলাফলে ট্রাম্প যে মাত্রার জয় পেয়েছেন, তাতে তাঁর মিত্ররাও হতবাক।
ট্রাম্পের জয়ে কিছু ডেমোক্র্যাটের মধ্যে বড় ধরনের ভয় ঢুকতে শুরু করেছে। ওমাহার একজন ডেমোক্র্যাট কর্মী কাঁদতে শুরু করেন। তিনি উদ্বিগ্ন– ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে কী করবেন!
ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, ‘মহান সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন ঘটে। তিনি যদি আবার জিতে যান, আমি মনে করি, আমেরিকার সেরা দিনগুলো আমরা পেছনে ফেলে এসেছি।’
ট্রাম্পের জয়ের কারণ নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইউএসএ টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্র রাজ্যগুলোতে ট্রাম্পের জয়লাভের ক্ষেত্রে তরুণ, কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ এবং হিস্পানিক ভোটারের সমর্থন বড় ভূমিকা রেখেছে।
২০১৬ সালের বিজয়ের মতো এবারের নির্বাচনেও তিনি অভিবাসন সমস্যা এবং অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসনের আমলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হারের তথ্য তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি সরকারবিরোধী জনমতও কাজ করেছে। গত এক বছরে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ভোটাররা আক্ষরিক অর্থেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে অনীহা দেখিয়ে আসছে। এর বড় কারণ মূল্যস্ফীতি।
এ নির্বাচনের ফলাফলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে লালের উত্থান দেখা যাচ্ছে। দেশটির তিন সহস্রাধিক কাউন্টির বেশির ভাগেই এবার ২০২০ সালের নির্বাচনের তুলনায় ভালো করেছেন ট্রাম্প। তিনি ২,৩৬৭টি কাউন্টিতে ২০২০ সালের তুলনায় উন্নতি করেছেন। মাত্র ২৪০টি কাউন্টিতে তাঁর ব্যবধান কমেছে। বাকি ৫৩৬টি কাউন্টির পূর্ণাঙ্গ ফলাফল তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, এমনকি অনেক রাজ্যে জনমত জরিপে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এগিয়ে থাকলেও সেগুলো ডানদিকে ঝুঁকেছে। ট্রাম্প অনেক কাউন্টিতে ভালো করেছেন যেগুলো ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন দিয়ে এসেছে।
‘ব্লু ওয়াল’ ভেঙে পড়ছে
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ‘ব্লু ওয়াল’ না নীল প্রাচীর ভেঙে ডেমোক্র্যাটদের আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন। ‘ব্লু ওয়াল’ বলা হয় সেসব রাজ্যকে, যেগুলো দীর্ঘদিন ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি ছিল। পরে অবশ্য সেগুলো দোদুল্যমান রাজ্যের তালিকায় নাম লেখায়।
পুরোনো ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ট্রাম্প ইতোমধ্যে পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিন রাজ্যে জিতেছেন। এই তিনটি ব্লু ওয়াল রাজ্যের ১৩০টিরও বেশি কাউন্টির সবকটিতে ট্রাম্প চার বছর আগের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২০ সালে ব্লু ওয়াল রাজ্যগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে জিতেছিলেন।
ট্রাম্প ২০১৬ সালে তিনটি ব্লু ওয়াল রাজ্যে জিতেছিলেন। তবে বাইডেন ২০২০ সালে সেগুলো পুনরুদ্ধার করেন। কমলা বলতেন, তাঁর ভাগ্য এই তিনটি রাজ্যের ওপর নির্ভর করছে।