বিটিভির চার কর্মকর্তা হত্যার বিচার থমকে সাক্ষীর অভাবে
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দীর্ঘ ৪৯ বছর ঝুলে আছে বিটিভির চার কর্মকর্তাকে অপহরণ করে হত্যার বিচার। গত বছর হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ উঠলেও সাক্ষী না পাওয়ায় থমকে গেছে বিচার কার্যক্রম।
হত্যকাণ্ডের শিকার বিটিভির চার কর্মকর্তা হলেন– তৎকালীন উপমহাপরিচালক মনিরুল আলম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এএফএম সিদ্দিকী, প্রধান হিসাবরক্ষক আকমল খান ও চিত্রগ্রাহক ফিরোজ কাইয়ুম চৌধুরী।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকা প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, চার্জশিটভুক্ত ৯ আসামির মধ্যে দু’জন মারা গেছেন। চারজন পলাতক। আর তিন আসামি উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী সমকালকে জানান, সম্প্রতি দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। বিটিভির চার কর্মকর্তা হত্যা মামলা দেখার সুযোগ হয়নি। দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর বিটিভি ভবনসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারে সেনা মোতায়েন করা হয়। এ সময় বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বিটিভিতে কর্মচারী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে আন্দোলন চলছিল। বিটিভি কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারী সমিতির মধ্যকার বিরোধ নিরসনের নামে এক পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিম্মি করে অনৈতিক সুবিধা আদায়ে গোপন বৈঠক হয়। এর পর ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন চার কর্মকর্তা। পরে তাদের আর খোঁজ মেলেনি। পরের বছর হাতিরঝিলের পানি শুকিয়ে গেলে তিনটি কংকাল পাওয়া যায়। ফরেনসিক পরীক্ষায় এগুলো বিটিভির তিন কর্মকর্তার শনাক্ত হলে তাদের আজিমপুর কবরস্থানে দাফন হয়। তবে এখন পর্যন্ত মনিরুল আলমের লাশ কিংবা কোনো চিহ্ন পায়নি পরিবার।
এ ঘটনায় চার পরিবারের পক্ষ থেকে শুরুতে অপহরণ মামলা হলেও, কংকাল উদ্ধারের ঘটনায় সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল করিম খান ১৯৯৯ সালের ১৮ আগস্ট ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট অভিযোগ গঠন করা হয়। পুলিশ ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও তারা জামিনে মুক্ত হন। ২০০৪ সালের ২৬ মে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। পরে এক আবেদনে মামলার বিচারকাজে স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। মামলার তিন আসামি পৃথকভাবে আবেদন করে দফায় দফায় স্থগিতাদেশ নেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সাক্ষ্য গ্রহণ আবার শুরু হয়। তবে সাক্ষী না পাওয়ায় বিচারকাজ থমকে গেছে। এখন পর্যন্ত মনিরুল আলমের নিকটাত্মীয় মুহাম্মদ আলী স্বপন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনিও ২০০৪ সালের ১৯ মে মারা গেছেন।
পলাতক আসামি হলেন বিটিভির অধিবেশন নিয়ন্ত্রক সৈয়দ আইনুল কবির, ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সদস্য কেএএম জাকারিয়া হায়দার ও শাহজাহান সিরাজী। জামিনে আছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অনারারি লেফটেন্যান্ট আলতাফ হোসেন। হাইকোর্ট থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বিটিভির তৎকালীন এডি আবুল কাশেম বাগোজা, আবদুল আওয়াল সরকার ও ১ নম্বর গ্রেডের প্রযোজক লুৎফর রহমান তালুকদার। অন্য আসামি বিটিভির তৎকালীন কর্মকর্তা আইনুজ্জামান মারা গেছেন।