মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের পরিচালক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে অপসারণ দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মবিরতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে সেবা না পেয়ে ফিরে গেছে রোগীরা।
জানা যায়, মানিকগঞ্জ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডায়াবেটিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাসান মাহমুদ হাদি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজনীন আকতারকে চাকরি থেকে অব্যাহতির দাবিতে কর্মবিরতিতে রয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে হাসপাতালে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ ও গুরুতর রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর মধ্যে বিরোধে গত কয়েকদিন ধরেই হাসপাতালে উত্তেজন বিরাজ করছে। হামলা, মামলার ঘটনাসহ সর্বশেষ গত ৩০ অক্টোবর থেকে কর্মবিরতি কর্মসূচি শুরু হওয়ায় হাসপাতালের কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। আউটডোরে প্রতিদিন সাড়ে তিনশ রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে ডায়াবেটিক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রধান দুই ফটকেই ভেতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফটকের সামনে বিশাল ব্যানারে কর্মবিরতির নোটিশ। ফটকের ভেতরে বসে আছেন কর্মবিরতিতে অংশ নেয়া হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফটকের বাইরে ভিড় করতে দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীর। রোগীরা অনুরোধ করেও ভেতরে ঢুকতে পারেননি।
রোগীদের একজন সিরাজুল ইসলাম (৭৫) এসেছেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার গাঙ্গুটিয়া থেকে। সঙ্গে স্ত্রী ও ভাতিজি। স্ত্রীর কাঁধে ভর রেখে সিরাজুল বলেন, তিনি নিয়মিত এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে আসছেন। কার্ডও আছে। হঠাৎ করে গতকাল থেকে ডায়বেটিকের মাত্রা খুব বেড়ে গেছে। পায়ের ক্ষততেও ব্যথা। তিনি বলেন, বাড়ি থেকে হাসপাতালে যাওয়া আসায় প্রায় এক হাজার টাকা খরচ। অথচ তাকে হাসপাতালে ঢুকতেই দেয়া হচ্ছে না। চিকিসকের পরামর্শ নিবেন, তাও পারছেন না।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ভাদ্রা গ্রামের রোকসানা আক্তার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, রোগীদের হয়রানি করে দাবি আদায় করার কৌশল ভালো না। তিনি অনেক কষ্টে তাঁর শাশুড়িকে নিয়ে এসেছেন। কোনো চকিৎসা না নিয়ে চলে যেতে হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা বংখুড়ি গ্রাম থেকে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন জোসনা বেগম (৫৫)। তিনি বলেন, প্রায় ত্রিশ মাইল দূর থেকে এসেছেন। কয়েকটা পরীক্ষা করতে হবে। অথচ এখন দেখছেন হাসপাতালে আন্দোলন চলছে। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদের মতো শত শত রোগী চিকিৎসা সেবা না বুধবার ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত গত ৩১ অক্টোবর। সেদিন বেশ কিছু মুখোশধারী হাসপাতালে হামলা করে মারধর করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার ও সমাজ কল্যাণ কর্তকর্তা নিতাই কুমার সরকারকে। এ সময় হামলাকারীদের হামলার মুখে পালিয়ে যান হাসপাতালের পরিচালক হাসান মাহমুদ হাদি। এ ঘটনায় নাজনীন মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারী রাসেল, নাজমুল, জুয়েলসহ অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, হামলাকারীরা নাজনীনকে শ্লীলতাহানি করে এবং মারপিটে গুরুতর আহত হন নিতাই কুমার। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
এই মামলার প্রতিবাদ ও হাসপাতালের পরিচালক হাদি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজনীনকে চাকরি থেকে অব্যাহতির দাবি করেন অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ ৮৭ জন কর্মকর্তা লিখিতভাবে এই দাবিতে গত রোববার ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। ওই দুইজনকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অব্যাহতি না দেওয়ার কারণে গতকাল বুধবার সকাল থেকে তারা ফটকে তালা দিয়ে কর্মবিরতি করেন।
হাসপাতালের প্রধান সহকারী ওবায়দুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পরে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিনশ রোগী সেবা নেন। এ ছাড়া গড়ে ১০ থেকে ১২ জন রোগী ভর্তি হন। কর্মবিরতির কারণে আউটডোরে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ভর্তি রোগীদের সেবা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আতিকুল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা (আজ) বৃহস্পতিবার থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছেন। এ ছাড়া তাদের অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।