ডেস্ক রিপোর্ট:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউসে অবিস্মরণীয় প্রত্যাবর্তন ঘটছে রিপাবলিকান দলের এই নেতার। পাশাপাশি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে তাঁর দল। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদেও রিপাবলিকান পার্টি এগিয়ে আছে। চার বছর পর হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসেই তিনি কয়েকটি প্রধান লক্ষ্যপূরণে উদ্যোগ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জয়ের পরদিন বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একটি সাধারণ লক্ষ্য নিয়ে দেশ পরিচালনা করব। সেটি হলো-যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করা। আমরা আমাদের সেই প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করব।’ এসব লক্ষ পূরণে ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার দিকে এখন সকলের চোখ। জয়ের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাছাইয়ের প্রক্রিয়া আগামী সপ্তাহগুলোতে শুরু করবেন। প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, অর্থনীতি, অভিবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখভালের জন্য ট্রাম্পের পছন্দের সম্ভাব্য তালিকায় কোন কোন ব্যক্তি স্থান পেতে পারেন, তার একটা ধারণা দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সম্ভাব্য তালিকাটি দেখে নেওয়া যাক-
অর্থমন্ত্রী হতে পারেন স্কট বেসেন্ট: ট্রাম্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বেসেন্ট। তাঁকে অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) হিসেবে বেছে নিতে পারেন ট্রাম্প। দীর্ঘদিনের হেজ ফান্ড বিনিয়োগকারী বেসেন্ট ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর শিক্ষকতা করেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বেসেন্ট দীর্ঘসময় ধরে ‘লেইস-ফেয়ার’ নীতির পক্ষে। ট্রাম্প-পূর্ব রিপাবলিকান পার্টিতে এই নীতি জনপ্রিয় ছিল। সমঝোতার হাতিয়ার হিসেবে শুল্কের ব্যবহার বিষয়ে ট্রাম্পের নীতির পক্ষেও তাঁকে কথা বলতে দেখা গেছে। তিনি অতীতে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক দর্শনের প্রশংসা করেছেন।
এ পদে আলোচনায় আরও যারা
জন পলসন: ট্রেজারি সেক্রেটারি হিসেবে ট্রাম্পের বিবেচনায় আসতে পারেন জন পলসন। পলসন একজন ধনকুবের। তিনি হেজ ফান্ড ব্যবস্থাপক। ট্রাম্পের একজন অন্যতম দাতা পলসন। দীর্ঘদিনের এই অর্থায়নকারী তাঁর সহযোগীদের বলেছেন, এই পদের বিষয়ে তাঁর আগ্রহ আছে।
ল্যারি কুডলো: ল্যারি কুডলোকেও ট্রেজারি সেক্রেটারি পদে দেখা যেতে পারে। তিনি ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কের একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের বেশির ভাগ সময় তাঁর প্রশাসনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কুডলো। তিনি আগ্রহী হলে অর্থনীতিকেন্দ্রিক অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদেও তাঁকে বেছে নিতে পারেন ট্রাম্প।
পুরোনো দায়িত্বেও দেখা যেতে পারে রবার্ট লাইথাইজারকে: লাইথাইজারকে ট্রেজারি সেক্রেটারি করা হতে পারে। তিনি ট্রাম্পের একজন অনুগত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছিলেন লাইথাইজার। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর প্রশাসনে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে প্রায় নিশ্চিতভাবেই আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লাইথাইজারকে ট্রেজারি সেক্রেটারি করা না হলেও তাঁকে অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতে পারেন ট্রাম্প। আবার লাইথাইজারকে তাঁর পুরোনো দায়িত্বেও দেখা যেতে পারে।
সম্ভাব্য ট্রেজারি সেক্রেটারি হতে পারেন লুটনিক: ট্রাম্পের সম্ভাব্য ট্রেজারি সেক্রেটারি হতে পারেন লুটনিক। তিনি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণসংক্রান্ত কার্যক্রমের কো-চেয়ার। আর্থিক সংস্থা ক্যান্টর ফিটজেরাল্ডের দীর্ঘদিনের প্রধান নির্বাহী লুটনিক। তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বলে জানা যায়। শুল্ক ব্যবহারসহ ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির ভূয়সী প্রশংসাকারীদের একজন লুটনিক। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কী কী নীতি প্রণয়ন করা হবে, সে বিষয়ে মাঝেমধ্যে তাঁকে অবাঞ্ছিত মতামত দিতে দেখা গেছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হতে পারেন রিচার্ড গ্রেনেল: গ্রেনেলকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করতে পারেন ট্রাম্প। তাঁর পররাষ্ট্রনীতি-সম্পর্কিত উপদেষ্টাদের মধ্যে আছেন গ্রেনেল। তাঁকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন গ্রেনেল। এ ছাড়া তিনি জার্মানিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ট্রাম্প। এই বৈঠকে গ্রেনেল উপস্থিতি ছিলেন। বিদেশি নেতাদের সঙ্গে গ্রেনেলের ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে। তবে তাঁকে নিয়ে নানান বিতর্কও আছে।
ও’ব্রায়েন হতে পারেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী: ও’ব্রায়েনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করতে পারেন ট্রাম্প। তাঁর প্রথম মেয়াদের সর্বশেষ (চতুর্থ) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন ও’ব্রায়েন। তাঁরা দুজন প্রায়ই জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ও’ব্রায়েন সম্ভবত পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা অন্য শীর্ষ পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত পদে নিয়োগ পেতে চাইছেন। ২০২১ সালে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছাড়েন। এরপর থেকে ও’ব্রায়েন বিদেশি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছেন। গত মে মাসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছিলেন।
বিল হ্যাগারটিও আলোচনায়: হ্যাগারটিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হতে পারে। টেনেসির এই সিনেটর ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের দায়িত্ব গ্রহণসংক্রান্ত কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের জন্য হ্যাগারটিকে একজন শীর্ষস্থানীয় প্রতিযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি মূলত রিপাবলিকান পার্টির সব উপদলের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক বজায় রাখছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের জন্য তাঁকে মনোনীত করা হলে তাঁর নিয়োগ সম্ভবত সহজেই সিনেটের শুনানিতে অনুমোদন পাবে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাপানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন হ্যাগারটি। সে সময় ট্রাম্প তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে তাঁর উষ্ণ সম্পর্ক থাকার কথা বলেছিলেন। হ্যাগারটির নীতি ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ।