ভারত ও পাকিস্তানের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়

প্রকাশিত: ১:৫৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২৩

পাকিস্তান এবং ভারতের উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিপর্যয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার বিকাল নাগাদ পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চল এবং ভারতের গুজরাট উপকূলে আঘাত হানতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়।
সিন্ধু সরকার উপকূলীয় কাটি বন্দর, ঠাঠা এবং বাদিন এলাকা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে করাচির উপকূলীয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার। এর ফলে সাগরে ঢেউয়ের উচ্চতা ৩৫ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত বাড়ছে। এরই মধ্যে ভারতের গুজরাটের দ্বারকা গুমতিঘাট এলাকায় ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সাগরে বন্যা দেখা দিয়েছে এবং ঢেউয়ের উচ্চতা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এনডিএমএর তথ্য অনুযায়ী, দেশটির উপকূলীয় এলাকা কাটি বন্দর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। সংস্থাটির মতে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় করাচি থেকে ৩৫০ কিলোমিটার এবং ঠাঠা থেকে থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর দিকে অবস্থান করলেও আজ এটি উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাবে এবং কাটি বন্দর ও গুজরাট রাজ্য অতিক্রম করবে। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ-এনডিএমএ উপকূলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। সবশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি ১৪ জুন সকালে উত্তর দিকেই অবস্থান করবে এবং এর পরে এটি পূর্ব দিকে সরে গিয়ে সিন্ধু প্রদেশের উপকূলীয় এলাকা কাটি বন্দরে আঘাত হানতে পারে। তার আগে এটি ভারতের গুজরাটের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ে পাকিস্তানের ঠাঠা, বাদিন, সাজাওয়াল, থারপারকার, করাচি, মিরপুরখাস, উমারকোট, হায়েদরাবাদ, ওরমারা, টান্ডো আল্লাহইয়ার খান এবং টান্ডো মোহাম্মাদ খান আক্রান্ত হতে পারে। এনডিএমএ বলছে, ঘূর্ণিঝড়ে দমকা বাতাস, ভারী বৃষ্টি এবং সাময়িক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের সরকার কাটি বন্দর, ঠাঠা ও বাদিন উপকূলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। পাকিস্তানের ভবন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ করাচির ৫৭৮টি ভবনকে অনিরাপদ ঘোষণা করেছে।
গুজরাটে মৃদু ভূমিকম্প

‘বিপর্যয়’ সতর্কতার মধ্যেই গুজরাটে মৃদু ভূমিকম্প হয়েছে গতকাল। উপকূল থেকে সরানো হয়েছে ৫০ হাজার মানুষকে। গতকাল বুধবার বিকালে মৃদু ভূমিকম্প হয়েছে গুজরাটের কচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সেখানে ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে ভূমিকম্পে আতঙ্কিত মানুষ। রিখটার স্কেলে বুধবারের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৫। ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়ের’ মোকাবিলায় কোমর বেঁধেছে গুজরাট। ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে সেখানে। সমুদ্রও উত্তাল আকার নিয়েছে। উপকূল এলাকা থেকে প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সৌরাষ্ট্র, দ্বারকা এবং কচ্ছে লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ।

‘বিপর্যয়ে’র জেরে গুজরাটের উপকূল এলাকায় অনেক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত গুজরাটগামী অথবা গুজরাট থেকে রওনা দেওয়ার কথা ছিল এমন ৯৫টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। বেশ কিছু ট্রেনের গতিপথ সংক্ষিপ্ত করেছে পশ্চিম রেল। বিমান পরিষেবাও বারবার ব্যাহত হয়েছে ‘বিপর্যয়ের’ ভ্রুকুটিতে। গুজরাটের উপকূলে মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৭টি দল এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১২টি দল। যুদ্ধকালীন তত্পরতায় কাজ করছেন তারা। প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনীও। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সেনার প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল বুধবার বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছেন। —বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকা