ভোলা প্রতিনিধিঃ
‘আল্লায় আমার বুকের ধনরে কাইড়া নিছে। আমি এহন কি নিয়া বাঁচমু, পোলাডারে কাইড়া নিয়া আল্লা কি সাজা দিল আমারেৃ’ বুকফাটা কান্নার সঙ্গে সঙ্গে বিলাপ করছিলেন আছিয়া বেগম। তাঁর চার বছর বয়সী ছেলে আবদুর রহমান নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন পর লাশ ভেসে ওঠে বাড়ির পাশের পুকুরে। সেই লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে আনার পর গতকাল শনিবার সকালে উঠানে কান্নায় ভেঙে পড়েন আছিয়া। তাঁর বিলাপের সুর ছুঁয়ে যায় স্বজন-প্রতিবেশিদের।
আবদুর রহমানের বাড়ি ভোলার চরফ্যাসন উপজেলায়। তার বাবা ওই উপজেলার দুলারহাট থানার নুরাবাদ ইউনিয়নের চকবাজারের আমির হোসেন মাঝি। আমির-আছিয়া দম্পতির চার ছেলে। তাদের মধ্যে সবার ছোট আবদুর রহমান।বৃহস্পতিবার বিকেলে মা আছিয়ার সঙ্গে প্রতিবেশী এক অসুস্থ ব্যক্তির বাড়িতে যায় আবদুর রহমান। সেখান থেকেই নিখোঁজ হয় শিশুটি। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে তার বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। শনিবার তাঁর বাড়ির অদূরে একটি পরিত্যক্ত পুকুরে পাওয়া যায় ছেলের লাশ।
আমিরের ভাতিজা ইব্রাহিম হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার তাঁর চাচি আছিয়া বেগম ছেলে রহমানকে নিয়ে দূরসম্পর্কের আত্মীয় নজির মাঝিকে দেখতে তাঁর বাড়িতে যান। তিনি রোগী দেখায় ব্যস্ত ছিলেন। রহমান শিশুদের সঙ্গে বাইরে খেলছিল। আছিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে অনেক খুঁজেও ছেলের সন্ধান পাননি। একটি পরিত্যক্ত পুকুরে শনিবার এক প্রতিবেশী অজু করতে গিয়ে দেখেন, রহমানের লাশ ভাসছে। পরে দুলারহাট থানা পুলিশ এলাকাবাসীর সহায়তায় লাশ উদ্ধার করে। তাদের ধারণা, খেলার সময় পুকুরে পড়েই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।রহমানের লাশ বাড়িতে আনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। আছিয়া বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘তোরা আমার বুকের ধনরে আইন্না দে। কে আমারে মা কইয়া ডাকব। পোলাডা কোলে উঠতে চাইছিল, লই নাই। এক্কেবারে চইলা গেল পোলাডা আমারে ছাইড়া।’
ছেলে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন আমির হোসেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ওইদিন সকালে পোলাডারে কোলে নিয়া আদর কইরা কামে যাই। কাম থেইক্কা আইসা আর পোলাডারে পাইলাম না। পোলাডারে কাইড়া নিয়া আল্লা কি সাজা দিল আমারে?’ বলতে বলতেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান তিনি। দ্রুত স্বজন-প্রতিবেশীরা তাঁকে সেবা দিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন।
দুলারহাট থানার ওসি আরিফ ইফতেখার জানান, পুকুরে নিখোঁজ শিশুর লাশ পাওয়ার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। ধারণা করা হচ্ছে, পানিতে পড়েই মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ না থাকায় মরদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।