নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ডেমরায় তিন কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের আহত ৪০ শিক্ষার্থী ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় ডেমরায় ড. মাহবুবুর মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) সামনে কলেজটির শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- নাইম (২০), সিয়াম (১৯), মোল্লা সোহাগ (১৮) রাজিম (১৭), শরিফুল (১৭), জাহিদ (২৫), মোস্তফা (২৩), রাতুল (২১), শফিকুল ইসলাম (২৬), মেহেদী হাসান (২৪), সজিব বেপারী (২৮), ফয়সাল (১৯), সাগর (২১), ইমন (২৪) ও সিয়াম (১৮)। তালিকার বাইরে আছে আরও ৩০ জন।ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত ৪০ জন এসেছে আমাদের কাছে। তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। ১০ জনের ভেতর কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করেছি। তাদের সেখানে ভর্তি করা হবে।
এদিকে ডিএমআরসি কলেজে এখনও সোহরাওয়ার্দী কলেজের অনেক শিক্ষার্থী আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করছেন ফিরে আসা শিক্ষার্থীরা। তাদের উদ্ধার করতে ডিএমআরসিতে গেছেন সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়। এদিন বিকাল ৪টায় তিনি রওনা করেন।
এর আগে বাংলা ট্রিবিউনকে অধ্যক্ষ ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, ছেলেরা অনেকে আটকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের এভাবে আটকে রাখা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা পুতুলের মতো। আমরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।
গতকালের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, গতকাল আমাদের ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই টাকা দিয়েও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যাবে না। ডকুমেন্টস যেগুলো নষ্ট হয়েছে টাকার মূল্যে নিরূপণ হবে না।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রাঙ্গণে আহত শিক্ষার্থীদের অনেককেই দেখা যায়। অধিকাংশই ইট পাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন।
দিগন্ত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ওপরে স্থানীয়রা চাপাতি, রামদা নিয়ে হামলা করেছে। সরাসরি অনেককে কোপ দিয়েছে। আহত কতজন ঠিক নেই। আমিও ইটের আঘাতে ব্যথা পেয়েছি। তারা কোপ দিয়ে শিক্ষার্থীদের খালে ফেলে দিয়েছে। আমরা ধারণা করছি ১০-১২ জন নিহত হয়েছেন।
এর আগে ৭ জন নিহত হওয়ার একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। কলেজের সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজ থেকে এসংক্রান্ত একটি পোস্টও করা হয়। এবিষয়ে সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, আমরা স্পট থেকে খবরটা পেয়েছিলাম। তিনটা ভিডিও আমাদের কাছে আছে। আরও ৪ জনকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তারা মারা গেছে কি গুরুতর আহত এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক শাহনাজ সিদ্দিকা বলেন, শিক্ষার্থীরা যেনো ডেমরাতে আজ না যায়— তা ঠেকাতে আমরা চেষ্টা করেছি। তাদের বোঝাতে চেয়েছি। এরপরও কিছু শিক্ষার্থী চলে গেছে। গতকালের ঘটনার পর আমাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। ক্লাসরুমগুলোর অবস্থাও লন্ডভন্ড হয়ে আছে। এই অবস্থায় কবে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করা যাবে আমরা জানি না।
এদিকে গতকাল সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল এন্ড কলেজে হামলা চালায়। কলেজটিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।