এসএম দেলোয়ার হোসেন:
আত্মগোপনে থেকেও শেষ রক্ষা হয়নি। দশ বছর পর অবশেষে র্যাবের হাতে ধরা পরেছে পুলিশ সদস্য বাদল মিয়া হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন নাথ ঘোষ। আজ শুক্রবার (১৬ জুন) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে গ্রেফতারের এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবককে শরীরে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে জানা যায়, মৃত বাদল মিয়া পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল গ্রেফতার রিপনকে প্রধান করে ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্তকারি কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন। বিচারিক কার্যক্রম শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রিপন নাথ ঘোষসহ মোট ৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) রাতে র্যাব-১০ এর একটি দল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন নাথ ঘোষকে গ্রেফতার করে।
এসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মাদকসহ বিভিন্ন নামে নিবন্ধনকৃত ৯টি মোবাইল সিম।
র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, ২০১২ সালে ৯ নভেম্বর মতিঝিলের এজিবি কলোনি এলাকায় একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রিপনের অন্যতম সহযোগী ও তার খালাতো ভাই গোপাল চন্দ্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গ্রেফতার হয়। এর কিছুদিন পর একটি মাদকবিরোধী অভিযানে রিপন নাথ ও তার একজন সহযোগী মাদকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়, যেখানে কনস্টেবল বাদল অভিযান চালানো টিমের সঙ্গে ছিলেন। ২ মাস কারাভোগ করে জামিনে বের হয় রিপন। পরবর্তীতে তারা জানতে পারে, মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেওয়া কনস্টেবল বাদল মতিঝিল এলাকায় বসবাস করছেন। বিভিন্ন সময় গ্রেফতারের পেছনে পুলিশ সদস্য বাদলের হাত রয়েছে বলে আসামিরা সন্দেহ করে। নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য রিপন তার সহযোগিদের নিয়ে কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার রিপন রেন্ট-এ-কারের প্রাইভেটকার চালানোর সুবাদে তার বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রিপন ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রেন্ট-এ-কার থেকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া নেয়।নিজে গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া অন্য সদস্যদের নিয়ে কনস্টেবল বাদলের কর্মস্থল শাহবাগে যায় তারা।
বিশ্বজিৎ ও কনস্টেবল বাদল একই এলাকায় বসবাস করায় পূর্ব পরিচিত। ফলে কনস্টেবল বাদলকে কৌশলে ডেকে আনার জন্য বিশ্বজিৎকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশ্বজিৎ কনস্টেবল বাদলকে ডেকে এনে কৌশলে প্রাইভেটকারে ওঠায়। তারা কনস্টেবল বাদলকে নিয়ে প্রাইভেটকারে করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকে এবং তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।
একপর্যায়ে রাজধানীর মতিঝিল কালভার্ট সংলগ্ন নির্জন এলাকায় রিপন নাথ ও তার অন্যান্য সহযোগিরা গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে কনস্টেবল বাদলকে হত্যা করে। পরবর্তীতে গুম করার উদ্দেশ্যে রাজধানীর মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে প্রাইভেটকার থেকে কনস্টেবল বাদলের লাশ ফেলে দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কনস্টেবল বাদল এভাবেই দায়িত্ব পালনকালে একটি মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেওয়ার কারণে মাদক চোরাকারবারি ও সন্ত্রাসীদের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে জীবন দেন। কনস্টেবল বাদলের মত এমন অনেক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত দেশ বিনির্মাণে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের হামলায় অনেক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য গুরুতর জখম অথবা অঙ্গ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতার রিপন মতিঝিল এলাকার চিহ্নিত মাদক চোরা কারবার এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। কনস্টেবল বাদল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও এ মামলার বিচারকাজ চলমান থাকা অবস্থায় জামিনে বের হয়ে টাঙ্গাইলে আত্মগোপনে চলে যায় রিপন। আত্মগোপনে থেকে মাদক কারবারের জন্য বিভিন্ন নামে নিবন্ধনকৃত মোবাইল সিম ব্যবহার করে। ২০১৩ সালের আগেও কয়েকবার মাদক মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করে।