আশঙ্কাজনক ডেঙ্গু পরিস্থিতি: শয্যা সংকটে হাসপাতালের মেঝেই ভরসা

প্রকাশিত: ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২৩

মৌসুম শুরু না হতেই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু রোগী দ্রুত বাড়ার কারণে হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। বেড না পেয়ে মেঝেই যেন রোগীদের ভরসা। রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে শয্যা সংকটের এমন চিত্র দেখা গেছে।

ডেঙ্গু রোগী দ্রুত বাড়ার কারণে হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। এজন্য বাধ্য হয়ে মেঝেতেই ঠাঁই নিতে হচ্ছে রোগীদের। ছবি: সময় সংবাদ
ডেঙ্গু রোগী দ্রুত বাড়ার কারণে হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। এজন্য বাধ্য হয়ে মেঝেতেই ঠাঁই নিতে হচ্ছে রোগীদের।

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ২৭০ জনেরও বেশি রোগী। যাদের বেশির ভাগের বাড়ি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যাত্রাবাড়ী, দনিয়া, মাতুয়াইল ও শনির আখড়া এলাকায়।

ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের শুরুতে যাত্রাবাড়ী অঞ্চল থেকে রোগী আসতে থাকে, বর্তমানেও তা অব্যাহত আছে বরং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, প্রতিনিয়তই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এর লাগাম টানা জরুরি, আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ার আগে পরিকল্পিতভাবে এর প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।

ডেঙ্গু রোগী বাড়ায় শয্যা সংকট রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বেশির ভাগ শিশুকেই ডেঙ্গুর জটিল লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে আনছেন অভিভাবকরা।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি
চলতি বছর এখন পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে চার হাজার। এর মধ্যে তিন হাজারের বেশি ঢাকায়। সারা দেশে শুক্রবার (১৬ জুন) পর্যন্ত ৪ হাজার ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ১৭৩ জন। ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৯৫৩ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩ হাজার ১৩৫ জন। বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৭৯ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৮৩ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৯ জন মারা গেছেন।

এবার ভিন্ন আচরণ করছে ডেঙ্গু রোগীরা
চিকিৎসকরা বলছেন, এ বছর আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই করছেন অস্বাভাবিক আচরণ। উপসর্গের শুরু হচ্ছে বমি, পাতলা পায়খানা ও দুর্বলতা দিয়ে। শক সিনড্রোমেই ঘটছে বেশির ভাগ মৃত্যু।

আগের মতো উচ্চমাত্রার পাঁচ দিনের জ্বরে না ভোগে, সামান্য জ্বর নিয়েও ডেঙ্গু হচ্ছে অনেকের। এ ছাড়া আগে চার পাঁচ দিন জ্বরে ভোগে, সেরে যাওয়ার পরই কেবল জটিলতা শুরু হতো। তবে বর্তমানে জ্বরের শুরুতেই অথবা দ্বিতীয়, তৃতীয় দিনেও জটিলতা নিয়ে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে রোগীর নিয়মিত পরীক্ষার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি ধরনের একটিতে কেউ আক্রান্ত হলে পুনরায় ওই ধরনটিতে আক্রান্তের ঝুঁকি না থাকলেও বাকি ৩ ধরনের আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার যদি কেউ আক্রান্ত হোন, তার জটিলতাও থাকে অনেক বেশি। চলতি বছর যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই এর আগেও ভুগেছিলেন ডেঙ্গুতে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মেয়র আতিকের বক্তব্য
ডেঙ্গুর এমন অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির জন্য দুই সিটির কার্যক্রমে ঘাটতির অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন,
এখনো অনেক কাজের জায়গা রয়ে গেছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের, এই ঘাটতিগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা দরকার।

তবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত কার্যক্রমের দাবি নগর কর্তৃপক্ষের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন,
সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে আসলে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়, সবার আগে জরুরি সচেতনতা, আমরা এই দিকটির প্রতিই আলাদাভাবে নজর রাখছি।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

অন্যদিকে সব তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে গবেষণাধর্মী মশক নিধনের পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ।

তিনি বলেন,

এখন যে প্রক্রিয়ায় আমরা মশক নিধন করছি তা অনেকটা অন্ধের মতো, কোনো কিছু না বুঝে ভুল পদ্ধতিতে চলছে এই প্রক্রিয়া, এর পরিবর্তন এখনই দরকার।

রোগীদের জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,

বেশি জ্বর দেখা দিলে ডেঙ্গু সন্দেহ করুন। এরপর দ্রুত পরীক্ষা করুন। যদি জ্বর থেকে দুর্বলতা বেশি হয়, তবে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হোন।