সিসিক নির্বাচন: গ্রিন-ক্লিন-স্মার্ট নগর গড়তে ২১ দফা ইশতেহার আনোয়ারুজ্জামানের
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
সিলেট প্রতিবেদক:
গ্রিন, ক্লিন ও স্মার্ট সিলেট নগরী গড়তে ২১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। একুশের চেতনা ও ২১ জুনের নির্বাচন মাথায় রেখে তিনি ২১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন। শনিবার দুপুরে নগরীর একটি হোটেলে ইশতেহার ঘোষণার সময় আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘স্বপ্ন না দেখলে স্বপ্ন পূরণ করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত আমার মাথার ওপর আছে। আমি নির্বাচিত হলে মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে নগর উন্নয়নে কাজ করব।’
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ইশতেহারে স্মার্ট নগর ভবন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা, নিরাপদ স্বাস্থ্যকর সিলেট, দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবান্ধব সিলেট গঠনের অঙ্গীকার তুলে ধরেন। এছাড়া নারীবান্ধব, ব্যবসা ও প্রবাসী বান্ধব সিলেট, যানজট নিরসনের মাধ্যমে সচল সিলেট, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্প্রীতির নগর ও সামাজিক অপরাধ নির্মূলসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রয়াত গুণীজনদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি গতানুগতিক নেতা হতে আসিনি। নির্ভরতার প্রতীক হতে এসেছি। নির্বাচিত হলে অপরিকল্পিত কসমেটিক উন্নয়ন করতে চাই না। নগর পিতা নয়, সেবক হয়ে কাজ করতে চাই।’
স্মার্ট নগর ভবন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান নগর ভবনের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এর অবকাঠামোগত অবস্থা কত শোচনীয়। ভবনটি অর্ধেক নির্মিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। সামনের খালি জায়গায় নির্মাণ যন্ত্রপাতির গাড়ি পার্ক করে রাখা, বেইজমেন্টের র্যাম্পের ঢালেও গাড়ি রাখা। যে প্রতিষ্ঠান থেকে একটি মহানগরের যাবতীয় নাগরিক সেবা পরিচালিত হবে সেই প্রতিষ্ঠান যদি অপর্যাপ্ত, অপূর্ণাঙ্গ ও অদক্ষ হয়, তখন জনগণকে কাঙ্খিত যুগোপযোগী সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
জলাবদ্ধতা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে ইশতেহারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এলাকাভিত্তিক জলাবদ্ধতা দূর করতে স্থানীয় এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শহরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার জন্য ফ্লাডওয়াল নির্মাণ, নতুন রেগুলেটর স্থাপন, ড্রেনেজ আউটলেট নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পিত নগরায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, শহরের দুটি দিক থাকে, একটি হচ্ছে ফাংশনাল বা কার্যকরী, অন্যটি হচ্ছে ভিজ্যুয়াল বা বাহ্যিক রূপ। কার্যকরী ব্যবস্থার দিক থেকে শহরে জাতীয় আদর্শাবলীর প্রতিফলন থাকা দরকার। মুষ্টিময়ের জন্য সুন্দর শহরের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য মানবিক পরিকল্পিত শহর বানানোতেই সিলেটের ভবিষ্যৎ নিহিত। তিনি নির্বাচিত হলে সরু চৌরাস্তার মোড়ে অপ্রয়োজনীয় স্তম্ভ, ডিভাইডার অপসারণ, যানজট নিরসনে রাস্তা প্রশস্ত, আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা গঠনের কথাও জানান।
কিশোর গ্যাং, ভূমি দস্যুতা, প্রবাসী বিনিয়োগ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, আমি নির্বাচিত হলে প্রতি বছরের কর্মকাণ্ড তুলে ধরব। তখন কিসে ব্যর্থতা ও কিসে সফলতা তা বোঝা যাবে। আমি চাই অন্যরকম নগর গড়তে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও সহমর্মিতাকে কাজে লাগিয়ে ‘সমৃদ্ধ সিলেট’ গড়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
তিনি বলেন, ইতিবাচক পরিবর্তনে আমি বদলে দিতে চাই সিলেটকে। সিলেটের ঐতিহ্য লালন করে রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্প্রীতিকে কাজে লাগিয়ে আগামীর প্রজন্মের জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক, গতিশীল ও অগ্রসর নগর গড়তে চাই। প্রচলিত কসমেটিক উন্নয়ন নয় দীর্ঘমেয়াদি দূরদর্শী পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রাণের সিলেটকে পরিণত করতে চাই সমৃদ্ধ সিলেটে। তিনি আগামী ২১ জুন সিটি নির্বাচনে স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাঁকে নির্বাচিত করার আহবান জানান ভোটারদের প্রতি।
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে, সংস্কৃতিকর্মী রজত কান্তি গুপ্তের পরিচালনায় ইশতেহার ঘোষনার সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুস সামাদ ডন, জেলা সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন প্রমুখ। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ছাড়াও অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সম্প্রীতি বাংলাদেশের মহাসচিব ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহধর্মিনী সেলিনা মোমেন, শিক্ষাবীদ ও এনজিও ব্যাক্তিত্ব ড. আহমদ আল কবির, বাফুফের নির্বাহী সদস্য মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক প্রমুখ।